আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

চট্টগ্রাম বন্দরে চুরির এক মাসেও শনাক্ত হয়নি জড়িতরা

চট্টগ্রাম বন্দরের সুরক্ষিত এলাকায় কনটেইনার থেকে ৩৮ লাখ টাকার ল্যাপটপ চুরি ও আটটি কনটেইনারে চুরির চেষ্টায় উদ্বিগ্ন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এক মাসেও জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বন্দরের সুনাম। শিগগিরই পদক্ষেপ না নিলে বড় অঘটনের শঙ্কা তাদের।

দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দরকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কেপিআই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রধান এই সমুদ্রবন্দর দিয়ে বছরে গড়ে ১১০ থেকে ১২০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। বন্দরের শেড ও ইয়ার্ডে থাকে শতশত কোটি টাকার মূল্যের পণ্য। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত সুরক্ষিত। দু'টি কনটেইনার টার্মিনালসহ সব জেটি ও শেড প্রায় দেড় হাজার সিসি ক্যামেরার আওতাধীন। গেইট পাস ছাড়া সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের সুযোগ নেই কারও। বের হওয়ার সময় চেক করা হয় কর্মরত শ্রমিকদের।

নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও সম্প্রতি জেআর ইয়ার্ডে একটি কনটেইনার থেকে ৩৮ লাখ টাকা মূল্যের ২৭টি ল্যাপটপ গায়েব হয়ে যায়। কনটেইনারটি খালাসে নিযুক্ত সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান বলছে, ঢাকার স্মার্ট টেকনোলজি লিমিটেডের, আমদানি করা দু'টি ল্যাপটপের কনটেইনার গত ১৫ অক্টোবর পুরোপুরি কায়িক পরীক্ষা করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এরপর সব পক্ষের উপস্থিতিতে বুলেট সিল লাগিয়ে নিরাপদ হেফাজতে হস্তান্তর করা হয়। অথচ ২২ অক্টোবর কনটেইনার খুলে গণনায় দেখা যায় ৬৫টি দামি গেমিং ল্যাপটপের মধ্যে ২৭টিই গায়েব। প্রায় ৫৪ কেজি ওজনের এতগুলো ল্যাপটপ চুরি হলেও সিসিটিভি ফুটেজে নেই আলামত।

সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান ইউনিক সিন্ডিকেটের ম্যানেজার তাসফিক আহমেদ বলেন, 'চুরি করেও যদি কেউ নিয়ে যেতে চায়, তাহলেও সে সর্বোচ্চ দু'টি নিয়ে যেতে পারবে। নিয়ে গেলেও তো কেউ দেখার কথা। ২৭টি ল্যাপটপ এক বা দুই জনের পক্ষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এটা নিশ্চয় একটা দল যারা কোনোভাবে এটা পোর্ট থেকে বের করতে সফল হয়েছে।'

সিএন্ডএফ এজেন্টরা জানান, আমদানি পণ্যের কনটেইনারের কায়িক পরীক্ষা হলে চুরি রোধে বিশেষ হেফাজতে দেয়া হয়। এরপরেও একাধিক কনটেইনারের সিল ভাঙায় সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। ঘটনা তদন্তে এরইমধ্যে বন্দর চেয়ারম্যান, নিরাপত্তা পরিচালক ও টার্মিনাল ম্যানেজার বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, 'একটা সংঘবদ্ধ চক্র এখানে আছে। কারণ যে কনটেইনারগুলোর সিল ভাঙ্গা হয়, চুরি করা হয় সেগুলো বেশ দামি পণ্য হয়। তাহলে তারা কী করে জানে যে এর ভেতর মূল্যবান দ্রব্য আছে।'

চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, 'এখানে অনেক দামি পণ্যও আসে। সেসব পণ্য যদি এই চোরদের হাতে পরে তাহলে আমদানিকারক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং আমরা কখনোই এটা চাইবো না যে বন্দরের মতো কটি সুরক্ষিত এলাকায় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটবে।'

এদিকে বন্দরের সুরক্ষিত এলাকা থেকে গত এক মাসে যুক্তরাজ্যগামী তৈরি পোশাকের অন্তত আটটি রপ্তানি কনটেইনারের সিল ভাঙে চোররা। সাধারণত শিপমেন্টের আগে রপ্তানি কনটেইনার বন্দরের পাঠানো হয়। কোনো কারণে শিপের শিডিউল দেরি হলে ইয়ার্ডে থাকে। এ সময় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হলেও, কার্টুন খোলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ব্যবহারকারীরা।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'আমরা কোনোভাবেই এটাকে আশা করি না। এবং বন্দরেরই এটা দায়িত্ব হবে তাদের সিকিউরিটি বাড়াতে হবে বা যেখানে যেখানে তাদের কমতি আছে এবং যারা করছে তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। এবং এটা যেন পরবর্তীতে না করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।'

সম্প্রতি বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে এক বৈঠকে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি জড়িতদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানায় শিপিং এজেন্টরা। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করলেও কথা বলতে অপরাগতা জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এসএস