মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক জয়ে নড়েচড়ে বসেছেন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন করে পদক্ষেপ নিচ্ছে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। বর্তমান বিশ্বে আলোচনার তুঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকট। এই ইস্যুতে ট্রাম্পের ভূমিকা কী হবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এসময় ট্রাম্পের অবকাশযাপন কেন্দ্র মার-এ-লাগোতে সঙ্গে ছিলেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। ট্রাম্প কথা শেষ না করেই জেলেনস্কির ফোন ধরিয়ে দিলেন ইলন মাস্ককে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে মাস্ককে ট্রাম্পের মন্ত্রীপরিষদে রাখার কোনো ইঙ্গিত নেই।
বুশ প্রশাসনের সাবেক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা কেবিন এস. কেলেমস বলেন,‘আমার মতে, ইলন মাস্ক বা কেনেডি কাউকেই ট্রাম্পের মন্ত্রীপরিষদে রাখা হবে না। তাদের ইমেজকে কাজে লাগানোর জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে প্রভাব বিস্তারের জন্য মাস্ককে ব্যবহার করা হবে। বর্তমানে এ ধরনের পদক্ষেপ সরকারের অভ্যন্তরে প্রভাব ফেলতে পারে যা অতীতে কম ছিল।’
যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য মাস্ককে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রায় ৭ মিনিট কথা বলেন জেলেনস্কি। স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে ইউক্রেনকে ফ্রি স্যাটেলাইট সুবিধা দিয়ে আসছেন মাস্ক। ভবিষ্যতেও এ সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলেন তিনি। তবে যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি। এদিকে, ইলন মাস্ক রাশিয়া নাকি ইউক্রেনকে সমর্থন জানাবেন তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে পোল করেন জেলেনস্কি। যদিও হোয়াইট হাউজ বলছে, সরকার পরিবর্তন হলেও ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।
কারিন জিন-পিয়ের হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেন, ‘ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার প্রদানের জন্য গত সেপ্টেম্বরে চুক্তি হয়। এটি এই মুহূর্তে পরিবর্তন হচ্ছে না। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছে ইসরাইল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন ট্রাম্প।’ মার্কিন নির্বাচনের দুই দিন আগেও ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন ৬৫ শতাংশ ইসরাইলি।
ফিলিস্তিনরা বলছেন দ্বি-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সমাধানের পথে হাঁটবেন ট্রাম্প। তবে বিশ্লেষকদের মতে, গাজা ইস্যুতে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প একই নীতিতে চলবে। ট্রাম্প তার যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে গর্ব করলেও নেতানিয়াহুকে খুব একটা বাধা দেবেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসির সিনিয়র উপদেষ্টা রিচার্ড গোল্ডবার্গ বলেন, ‘আমার মতে, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দেশই কাজ করবে। তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর চিন্তাভাবনা একই ধরনের। নিজের দেশকে রক্ষায় দুই নেতাই একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নেতানিয়াহুর সামনে একটি বিরাট সুযোগ এসেছে।’
২০১৮ সালে পারমাণবিক চুক্তি থেকে ইরানের সরে দাঁড়ানোকে সহজভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের বিজয়ে সংকটের মুখে পড়তে পারে ইরানও।