চীন ও মেক্সিকোর পণ্যে চড়া শুল্ক আরোপ কিংবা শপথ নেয়ার আগে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করার মতো প্রতিশ্রুতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শুরু থেকেই 'টক অব দ্য টাউন' ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে জয়ী হতেই অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো থেকে শুরু করে ইরান ইস্যুতে কতটা শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প তা নিয়েও শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। তাই বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর নজর এখন ট্রাম্প টু পয়েন্ট ও-এর পররাষ্ট্রনীতিতে।
নির্বাচনী বিতর্ক ও প্রচারণায় বহুবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে হামাস কখনোই ইসরাইলে হামলার দুঃসাহস দেখাতো না। বাইডেন প্রশাসনের গাফিলতির কারণে ইরান অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে আরও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে এমন অভিযোগও তুলেছেন তিনি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত বন্ধের বিষয়ে ট্রাম্পের নীতি ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও ভয়ংকর হতে পারে এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, ফিলিস্তিন অধিগ্রহণের জন্য ইসরাইল সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করলেও ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বাধা দেবেন না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক জ্যাক বিচাম্প বলেন, 'তারা বিশ্বাস করেন, ইসরাইল কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ট্রাম্প কখনোই বাধা দেবেন না। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের গাজা অধিগ্রহণ ও সেখানে বসতি স্থাপনে কোনো বাধা আসবে না। পাশাপাশি উপত্যকাটিতে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের সরিয়ে নেয়া এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ ইসরাইল যেন কখনোই না হারায় তার ব্যবস্থা করা হবে।'
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পরম বন্ধু আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে স্মার্টেস্ট সেলসম্যান বলে উল্লেখ করে বহু আগেই সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউক্রেনকে অর্থ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে নড়েচড়ে বসতে পারেন ট্রাম্প। মার্কিন নাগরিকদের অর্থ ভিনদেশিদের যুদ্ধে খরচ করার ব্যাপারে অনীহা আছে ট্রাম্পের।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক রিচার্ড এঞ্জেল বলেন, 'ট্রাম্পের বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, জেলেনস্কি যখনই যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ইউক্রেন যুদ্ধকে বিক্রির চেষ্টা করেন আর বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার অনুদান নিয়ে যান। এটাই জেলেনস্কির চরিত্র। এর মানে ট্রাম্প যখন বলছেন তিনি যুদ্ধ বন্ধ করবেন, এর অর্থ তিনি ইউক্রেনের অর্থ সহায়তা পাঠানো বন্ধ করবেন। এটা পুতিনের জন্য দারুণ খবর।'
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আধিপত্য ও তাইওয়ান ইস্যুতে সাংঘর্ষিক অবস্থানে বেইজিং ও ওয়াশিংটন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ, আইসিজি'র পর্যবেক্ষণ বলছে, চীনা গাড়ির ওপর চড়া শুল্কারোপের ঘোষণা দিলেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বাণিজ্য ছাড়া অন্য কোন ইস্যুকে তেমন একটা গুরুত্ব দেবেন না ট্রাম্প।
এবারের নির্বাচনে 'ডিসাইংডিং ফ্যাক্টর' হিসেবে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে এগিয়ে রাখছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। তবে অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা যথেষ্ট সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ হবে বলেও মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসীর দেশ মেক্সিকোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতির আশঙ্কাও করছেন তারা।