দেশে এখন
0

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও ছাত্র ইউনিয়ন

সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও ছাত্র ইউনিয়ন। তারা বলছে, এর মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হলো। তবে শুধু কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ না করে প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচারের দাবি তাদের। আর আইনজীবীরা বলছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনটির আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতারাও অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে।

একটি সংগঠন কতটা নৃশংস ও বেপরোয়া হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ বিশ্বজিৎ দাস। ২০১২ তে এক উন্মুক্ত পৈশাচিকতার সাক্ষী হয় দেশ। শত শত মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ।

শুধু শিবির সন্দেহে মানুষ হত্যা করা যায় তার আরেক বড় উদাহরণ বুয়েটের আবরার ফাহাদ। নিজের ক্যাম্পাসের বড় ভাই, সহপাঠী ছাত্রলীগের হাতে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়ে প্রাণ হারায় এই মেধাবী ছাত্র।

বিরোধী রাজনীতির বাইরেও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জীবন দেয় অনেক সাধারণ মানুষ। আবু বকর ছিল তাদের একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে বাণিজ্য ও দখলদারিত্বের জেরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সশস্ত্র সংঘর্ষে জীবন যায় আবু বকরের।

২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের আগে আবু বকর, আবরার ফাহাদের মতো গত ১০ বছরে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ জীবন নিয়েছে ২৪ জন শিক্ষার্থী।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ছাড়া শুধু ২০২৪ এর ৮ মাসেই ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের হাতে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। আহত হয়েছেন আড়াই হাজার।

বিরোধী দল ও মত দমন ছাড়াও ন্যায্য আদায় করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয় অসংখ্য শিক্ষার্থী। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন এবং সবশেষ জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সেটি স্পষ্ট হয়। ২৪ এর ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করে নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি। দেশজুড়ে মাসব্যাপী চালায় তাণ্ডব।

গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। 'সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯'–এর ক্ষমতাবলে 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ'কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রদল মনে করে, এর মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি থেকে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। ছাত্রলীগকে দেখামাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, 'আমি মনে করছি বাংলাদেশের কলঙ্কজনক ছাত্ররাজনীতির পরিসমাপ্তি ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে যে আন্দোলন করেছে বিশেষ করে জুলাই এবং আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে সেই স্পিরিটের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা একটি ইতিবাচক রাজনীতি করবে।'

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির বলতে নিষিদ্ধ শুধু কাগজে, কলমে না করে প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য আইনী বিচার করতে হবে।

ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমি মনে করি এটি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জন্য প্রাপ্য ছিল। শুধু নিষিদ্ধের মধ্যে না তাদের এই অপকর্মের আইনীগত বিচার হওয়া দরকার।'

ছাত্র ইউনিয়নের দাবি, এই দায় আদেশদাতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেও নিতে হবে। তাঁদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, 'বাংলাদেশের ছাত্র ইউনিয়নের নানান পর্যায়ের যে নেতা কর্মীরা আছে তারা ছাত্রলীগের নিপীড়ন,নির্যাতন এবং খুনের শিকার হয়েছেন। একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ছাত্রলীগ আসলে সন্ত্রাসবাদী ধারার আদর্শ। তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার।'

আইনজীবীরা বলেন, 'নিষিদ্ধ সংগঠনটির আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতারাও অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। নিষিদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রচারেরও কোনো সুযোগ রইলো না।’