রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের দ্বিতীয় পর্ব ছিল আজ। বিএনপি জামায়াতের পর এ পর্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা সাথে বসার জন্য ডাক পান এলডিপি, লেবার পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট। পুরো সংলাপজুড়েই আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গ।
বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া সংলাপে, নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে এমপিসহ বেশিরভাগ দল। তারা বলছেন, দুর্নীতিবাজ ও হত্যাকারীদের বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে, কোনোভাবেই তার আগে নয়। আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলকে সব ধরনের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার দাবি জানান তারা।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলকে সব ধরনের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে হবে।’
এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বলেন, ‘আজ আমরা ২৩টা প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য যা প্রয়োজন প্রস্তাবে সেগুলো রয়েছে।’
অলি আহমেদ বলেন, ‘আগামীতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন, সুন্দর প্রশাসন চালানোর জন্য, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য, দ্রব্যমূল্যের জন্য মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, তাদের সহযোগিতা করার জন্য আমাদের প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে।’
সন্ধ্যায় হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংলাপ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, যারা বিগত ৩টি পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাভবান হয়েছে, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পেছনে বাধা তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একক কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।’
গণহত্যার সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রশাসনের লোকজন কীভাবে পালিয়েছে, এই বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
মাহফুজ আলম জানান, নির্বাচন কমিশন গঠনের দ্রুতই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলে সংলাপে দলগুলোকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোন চাপ বা হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। তারাই ঠিক করবেন নির্বাচন কমিশনার কারা হবেন।’
এদিকে গণহত্যার সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন লোকজন কীভাবে পালিয়েছে, এই বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, 'এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার। কেন, কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে সরকার তদন্ত করছে। একটা বিষয় স্পষ্ট তা হলো, ৫-৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কোনও সরকার ছিল না, প্রায় এক সপ্তাহের মতো পুলিশ ধর্মঘটে ছিল, ফলে অনেক ক্ষেত্রে শুনছেন যে, লোকটা পালাচ্ছেন, কিন্তু পুলিশ দিয়ে ধরতে হবে, সেই জায়গায় ওই সময় একটা গ্যাপ ছিল। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল তাদের গ্রেফতার করা, এখনও চেষ্টা করছি—যারা বাংলাদেশের আছেন, তাদের গ্রেফতার করতে। তারা কীভাবে পালালো তা নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।'
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কোনো সংলাপ বা বৈঠকে ডাক পায়নি বিগত ৩টি সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। চলমান রাষ্ট্র সংস্কারের আলোচনায়ও দলটিকে এখন পর্যন্ত ডাকা হয়নি।