খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হারদিপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের জেরে বেশ কিছুদিন ধরেই ভারত ও কানাডার সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। সম্প্রতি জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে ট্রুডো-মোদির দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করে কানাডা। কারণ নিজ্জর হত্যায় ভারতের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে নয়াদিল্লি বলছে ভারতকে কলঙ্কিত করে নিজের গদি রক্ষায় ব্যস্ত জাস্টিন ট্রুডো।
মাঝখানে ইস্যুটি আলোচনায় ছিল না। স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ অক্টোবর) কানাডিয়ান পুলিশ জানায়, হত্যা, চাঁদাবাজি ও সহিংস কর্মকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত আছেন। যা কানাডার গণতান্ত্রিক সার্বভৌমত্বকে আঘাত করা হয়েছে।
রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ কমিশনার মাইক ডুহেম বলেন, 'আমাদের তদন্তের অনেক তথ্য উঠে এসেছে। কানাডায় অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার যথাযথ তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে কানাডায় বসবাসকারী সব বাসিন্দাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।'
পারস্পরিক এই বিরোধের জেরে দুই দেশের ছয় জন করে মোট ১২ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার পর নতুন করে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছায়। কানাডায় বসবাসরত ২০ লাখ ভারতীয়র মধ্যে আট লাখ বাসিন্দা শিখ। এদের মধ্যে আট হাজারের মতো খালিস্তানপন্থি আন্দোলনে জড়িত। আর ট্রুডো সরকারে আছেন ২৪ জন শিখ পার্লামেন্ট সদস্য। যদিও ভারতের চোখে খালিস্তানপন্থিরা উগ্র ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে পরিচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রভাব পড়তে দুই দেশের শত শত কোটি ডলারের বাণিজ্যে। ভারত ও কানাডার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২২-২৩ সালে ছিল ৮১৬ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারত ৪১০ কোটি ডলারের ওষুধ, রত্ন, অলংকার, বস্ত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করেছে। আর কানাডা থেকে আমদানি করেছে ৪০৬ কোটি ডলার মূল্যের ডাল, কাঠ, মণ্ড ও কাগজ এবং খনিজ দ্রব্য।
২০২২ সালে ভারতে কানাডার বিভিন্ন পেনশন তহবিলের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। কানাডার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে চতুর্থ অবস্থানে ভারত।
ভারত ও কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২০০টির বেশি শিক্ষাবিষয়ক সমঝোতা রয়েছে। এছাড়াও, কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় শীর্ষে ভারতীয়রা। কানাডার ব্যুরো ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের তথ্য মতে, ২০২১ সালে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা কানাডার অর্থনীতিতে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের অবদান রেখেছেন।
সাম্প্রতিক ঘটনায় রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গে এবার দুই দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।