ঝুঁকিপূর্ণ মুরাদনগর ভাশখোলা বেইলি ব্রিজ। দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না হওয়ার কারণে স্টিলের পাটাতনগুলো নষ্ট হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। আটকা পড়ছে গাড়ির চাকা। মেয়াদোত্তীর্ণ ব্রিজের গোড়ায় যানবাহন উঠানামায় হচ্ছে বিকট শব্দ। আতঙ্কে পারাপার হচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। অবস্থা আরও নাজুক হয়ে আছে গোমতী নদীর উপর মুরাদনগর সদরের বেইলি ব্রিজের। প্রায় একই দশা কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ-মুরাদনগর সড়কের পাঁচ পুকুরিয়া, ছালিয়াকান্দি, নেয়ামতকান্দি, ভোরার চর ও জাহাপুর বেইলি ব্রিজেরও।
৩৫ কিলোমিটারের এ সড়কে আটটি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজের উপর দিয়ে প্রতিদিন পথচারীর পাশাপাশি চলাচল করছে শত শত হালকা ও ভারি যানবাহন। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ব্রিজ পারাপারে সৃষ্ট যানজটে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো ভেঙে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি থাকলেও ২০ বছরেও পূরণ হয়নি যাত্রী ও বাসিন্দাদের চাওয়া।
স্থানীয় একজন বলেন, 'ছোট থেকে এসব ব্রিজ দেখছি। রাস্তা সুন্দর হচ্ছে কিন্তু এই ব্রিজ আগের মতোই আছে। ব্রিজের কোনো কাজ করে না। বড় গাড়ি আসলে একটা গাড়ি পার হতে পারে, অন্য পাশের গাড়ি আসতে পারে না। তাও একটা গাড়িই চারা কাত হয়ে পড়ে থাকে, জ্যাম লেগে যায়।'
কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের বিকল্প হিসেবে কম সময়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতে এ সড়ক ব্যবহার করে আসছেন মুরাদনগর, দেবীদ্বার ও বাঞ্ছারামপুরের বাসিন্দারা। যাত্রায় বেইলি ব্রিজের ভোগান্তি ছাড়াও রয়েছে বেহাল সড়কের দুর্ভোগ। ইট, খোয়া ও পাথর ওঠে সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত ও খানাখন্দ। ঝুঁকি নিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, বাস, ট্রাক্টরসহ ইঞ্জিন চালিত যানবাহন চলাচল করলেও চলাফেরায় নাভিশ্বাস উঠে সুস্থ-সবল যাত্রীদেরই।
যাত্রীদের মধ্যে একজন বলেন, 'ব্রিজের দুই পাশেই রাস্তা একহাত, দুইহাত করে গর্ত হয়ে গেছে। বৃষ্টি আসলে রাস্তা বোঝা যায় না কোথায় গর্ত। গাড়ির চাকা আটকে যায়, গাড়ি চলতে পারে না। জ্যাম পড়ে পুরো এলাকায়।'
তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, ইলিয়টগঞ্জ থেকে মুরাদনগর, রামচন্দ্রপুর থেকে বাঞ্ছারামপুর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটারের এ সড়কের বিদ্যমান ঝুঁকিপূর্ণ আটটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে পাঁটি আরসিসি গার্ডার সেতু ও তিনটি আরসিসি কালভার্ট, সড়ক প্রশস্তকরণ ও বাঁক সরলীকরণ উন্নয়নে নেয়া হয়েছে ৩৪৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রকল্প। যাত্রী ও জনসাধারণের ভোগান্তি এড়াতে দ্রুতই নির্মাণকাজে হাত দেয়ার কথা জানালেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, 'তিনটি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে দু'টি প্যাকেজের কাজের জন্য আমরা দরপত্র আহ্বান করেছি। আর একটা প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মানুষের অনেক দিনের দাবি যে এখানকার বেইলি ব্রিজের কারণে অনেক কষ্ট হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ওনারা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন।'
এদিকে, কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের ডাকাতিয়া নদীর উপর মুদাফ্ফরগঞ্জ বেইলি ব্রিজও প্রায় চলাচলে অনুপযোগী। বার্ধক্যে ধুঁকতে থাকা ব্রিজে ভারী যান উঠলেই পাটাতন খুলে পড়ছে। বন্ধ হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাসিন্দাদের দাবি বড় ধরনের দুর্ঘটনার পূর্বেই পাকা সেতু নির্মাণ জরুরি।