প্রায় ৮০ বছর ধরে পারমাণবিক বোমা হামলার ক্ষত বহন করে চলেছে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর। তাই বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা নোবেল শান্তি পুরস্কার পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ায় কাজ করা প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে নিজ দেশে আসার খবরে উচ্ছ্বসিত জাপানের সাধারণ মানুষ।
জাপানের সাধারণ মানুষের মধ্যে একজন জানান, পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার বিশ্বের একমাত্র দেশ জাপান। অন্যান্য দেশে একই ধরনের হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। জাপানই এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পারে। এটি আমাদের নিশ্চিত করতেই হবে।
আরও একজন জানান, পরমাণু শক্তি বিশ্বের জন্য লাভজনক হলেও এর অপব্যবহার যেন না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিশ্ববাসীকে সেটাই মনে করিয়ে দেবে।
নোবেল পুরস্কারের ১২৩ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার এ সম্মাননা এলো জাপানের ঝুলিতে। ১৯৪৫ সালে পারমাণবিক হামলার তেজষ্ক্রিয়তায় আজও ভুগছেন অসংখ্য মানুষ। ভুক্তভোগীদের জন্য কাজ করার স্বীকৃতি পায় নিহোন হিদানকিয়ো নামের সংগঠনটি। এ স্বীকৃতি সকল পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের জন্য বার্তা, জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষ আজও এ অস্ত্রের ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করছেন। সংখ্যাটি প্রতি বছর কমে আসছে। সারা বিশ্বে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলনের মেরুদণ্ড এসব মানুষ।’
পারমাণবিক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী জাপানি প্রতিষ্ঠানকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা রাশিয়ার পারমাণবিক হামলার হুমকির বিরুদ্ধে বার্তা। বলছে আড়াই বছরের রুশ আগ্রাসনে বিধ্বস্তপ্রায় প্রতিবেশী ইউক্রেন।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, ‘কোন বিশ্বে আমরা বাস করছি, সেটাই স্পষ্ট হয়েছে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারে। রাশিয়ার প্রতি এটা এক ধরনের অনানুষ্ঠানিক বার্তা যে দেশটি সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক হামলার ভয় দেখিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে।’
প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্রে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না হলে এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে রাশিয়া পারমাণবিক হামলা চালানোর কথা ভাববে বলে গেলো মাসে জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও পরাশক্তিধর দেশগুলোর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের চিন্তা করা উচিত নয় বলে শুক্রবার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণার সময় সতর্ক করে নরওয়েজিয়ান কমিটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক উত্তেজনার এ সময়ে সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে এ পুরস্কার।
চ্যাথাম হাউজ ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের গবেষণা পরিচালক প্যাট্রিশিয়া লুইস বলেন, ‘আমি মনে করি, মানবতাবোধের কথা মনে করিয়ে দিতে এ সতর্কতা। একইসাথে যে দেশগুলোর পারমাণবিক অস্ত্র আছে, সেই দেশগুলোর মধ্যে একতার গুরুত্ব এবং বহুপাক্ষিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি পুনরুদ্ধারেরও বার্তা এটি।’
ছয় বছর ধরে জার্মানি, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা আর এশিয়াজুড়ে চলতে থাকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফল নির্ধারণ করে দিয়েছিল জাপানে তিনদিনের ব্যবধানে পরপর দু'টি পারমাণবিক বোমা হামলা।
মিত্রদের হয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ দুই বোমা ফেলার পরপরই আত্মসমর্পণ করে তৎকালীন জাপান সরকার। হামলায় প্রাণ যায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের। হামলায় বেঁচে গেলেও এখনও জাপানে তেজস্ক্রিয়তায় ভুক্তভোগী হিসেবে নিবন্ধিত এক লাখের বেশি মানুষ।