দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হলো পাট। তবে সময়ের সাথে কমছে এই পাটজাতপণ্যের রপ্তানি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের ঘোষণায় এই খাতে কমেছে প্রণোদনার পরিমাণ। সবমিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন নাটোরের রপ্তানিকারকরা।
২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের ঘোষণার আগে তিনটি ক্যাটাগরিতে রপ্তানিকারকদের নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হলেও পরে তা কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে তলানিতে নেমেছে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি।
পাটপণ্য রপ্তানিকারক শ্যাম সুন্দর আগারওয়াল বলেন, 'বাংলাদেশ সরকার থেকে আগে ক্যাটাগরি অনুযায়ী আমাদের তিন ধরনের সাবসিডি (ভর্তুকি) দিতো। আগে ২০ শতাংশ, ১২ শতাংশ ও ৭ শতাংশ সাবসিডি দিতো। এটা দুই ধাপে কমে এখন ২০ শতাংশেরটা করা হয়েছে ১০ শতাংশ। অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক দিয়ে দেয়ার পর আমরা আর ভারতে রপ্তানি করতে পারছি না।'
জেলায় সরকারিভাবে কোনো জুট মিল না থাকলেও বেসরকারিভাবে রয়েছে দু'টি মিল। এসব মিলে পাটের বস্তা, সুতা, চটসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন হয়। মিল দু'টির উৎপাদিত পণ্যের সিংহভাগ রপ্তানি হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এছাড়া ভারতের পাশাপাশি কাঁচাপাট রপ্তানি হয় পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে। যা থেকে বছরে আয় হয় অন্তত দেড়শ' কোটি টাকা।
কিন্তু রপ্তানিমুখী পাটজাত পণ্যে প্রণোদনা কমিয়ে দেয়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এতদিন প্রণোদনার অর্থ দিয়ে খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতেন তারা। তবে বর্তমানে বেশি দামে পাট কিনেও রপ্তানি করতে না পারায় এসব পণ্য পড়ে রয়েছে।
রপ্তানিকারক প্রদীপ আগারওয়াল বলেন, 'আগেও জুটমিলগুলো রুগ্ণ অবস্থায় ছিল, ভালোভাবে চালাতে পারছিলাম না। এখন এটা আরও দুর্বিষহ হয়ে গেছে। প্রণোদনাটা কমিয়ে দেয়ার কারণে আমাদের এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে।'
পদ্মা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী অজয় আগারওয়াল বলেন, 'বর্তমান সরকার যদি এই রপ্তানির ওপর প্রণোদনাটা দেয় তাহলে আমাদের জন্য বিশ্ববাজারে পাট রপ্তানি অনেক বড় আকারে করা সম্ভব।'
এ অবস্থায় মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে রপ্তানিকৃত পাটজাত পণ্যের উপর ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ। ২০১৬ সালে ১৫০ থেকে ২০০ ডলার শুল্ক আরোপ করে দেশটির সরকার। যা চলবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। তাই প্রণোদনা বাড়ানোর পাশাপাশি অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারেরে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে রপ্তানিকারকরা।