লেবাননে হামলার জবাবে ইসরাইল ভূখণ্ডে পাল্টা হামলা চালিয়েছে হামাস ও হিজবুল্লাহ। রাজধানী তেল আবিবসহ বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে হামলা চালায় তারা। এসময় ইসরায়েলজুড়ে বেজে উঠে সাইরেন। ইসরাইলের তৃতীয় বৃহত্তম শাইফা শহরের একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে দুই দফায় রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। এতে আহত হন অন্তত ১২ জন।
হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলের বাণিজ্যিক নগরী তেল আবিবে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত দুজন আহত হয়েছে। ইসরাইল ভূখণ্ডে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডস। এছাড়া, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরাইলের কেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে। প্রায় ১৯০টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে যার বেশিরভাগই প্রতিহত করার দাবি করছে দেশটির সামরিক বাহিনী।
হুতির সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারা বলেন, ‘হুথি বিদ্রোহীরা ইসরাইল ভূখণ্ড লক্ষ্য করে দুটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানগুলো জাফা অঞ্চলে ইসরাইলের দুটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে দুইটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়। দুইটি অভিযানই সফল হয়েছে।’
এদিকে, হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র এক ভিডিও বার্তায় বলেন, জিম্মিদের ভাগ্য এখন নির্ভর করছে ইসরাইল সরকারের ওপর। তারা বন্দি বিনিময়ে রাজি না হলে জিম্মিদের ভাগ্যে করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
আল কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত গাজাসহ মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের আগ্রাসন বন্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জিম্মিদের ভাগ্য একটি সুতার ওপর ঝুলে থাকবে। এমনিতেই জিম্মিদের মনোবল ও স্বাস্থ্যের অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। তাদের ভাগ্য এখন ইসরাইল সরকারের ওপর নির্ভর করছে।’
যুদ্ধের এক বছরে জাতিসংঘের এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইসরাইল। সেখানে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত বলেন, হামাস নির্মূল ও সব জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত লড়াই চলবে। এ সময় হতাহত ও জিম্মি ইসরাইলিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ‘ইহুদি জনগণের খারাপ দিন শেষ। আমাদের নিজেদের রক্ষার জন্য বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। আমরা এখন অরক্ষিত নই। ইহুদি জনগণের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র ইসরাইল। সামরিক শক্তিতে বলিয়ান এবং নিজেদের রক্ষা করার সাহস আছে।’
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘এক বছর ধরে জিম্মিদের প্রিয়জনকে দেখতে মরিয়া। এমন পরিস্থিতির পরও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এবং বাইরে এমন কিছু লোক আছে যারা হামাসের নৃশংসতার নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি হামাস শব্দটিও বলতে চাই না অনেকে। হামাসের কর্মকাণ্ডের জন্যই গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।’
এদিকে, নেতানিয়াহু সরকারকে ব্যর্থ বলেছেন, জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা। তারা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, নেতৃত্ব ও কৌশলগত পরিকল্পনার অভাবে জিম্মিদের উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইসরাইলি পার্লামেন্ট ভবন নেসেটে সাদা ও নীল রঙে স্মরণ করা হয় হতাহতদের। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিভিন্ন অংশে ফিলিস্তিনপন্থী ও ইসরাইলপন্থি বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ করে।
হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানাতে টাইমস স্কয়ারে জড়ো হন ইসরাইলপন্থীরা। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানান ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশ করেছে ইরান।
এতকিছুর পরও গাজা ও লেবাননে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিমান ও রকেট হামলার পাশাপাশি চলছে স্থল অভিযান।