শিক্ষা
দেশে এখন
0

কেন শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীরা আসতে চান না?

অন্য অনেক পেশার চেয়ে অবহেলিত হয়ে আছে শিক্ষকতা। এখানে নেই যেমন পর্যাপ্ত আর্থিক নিরাপত্তা, তেমনি পদোন্নতি'র বৈষম্য তো আছেই। এমন নানা কারণে এ পেশায় মেধাবীরা আসতে অনাগ্রহী। শিক্ষক সংকট থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানও ব্যাহত হয়। আর কার্যকর প্রশিক্ষণের অভাবে দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি স্পষ্ট।

শিক্ষা যেখানে জাতির মেরুদণ্ড, সেখানে সেই মেরুদণ্ডকে সোজা এবং শক্তিশালী করে জাতি গড়ার দায়িত্ব থাকে শিক্ষকদের কাঁধেই।

দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক। এখানে স্নাতক শেষে ১৩তম গ্রেডে সহকারী শিক্ষকের পদে যোগদান করতে হয়। যেখানে মূল বেতন ১১ হাজার টাকা।

আর সাড়ে ৪শ' সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রায় ১৩ হাজার। এখানে সহকারি শিক্ষকের গ্রেড ১০ম, যেখানে মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা।

দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। যেখানে এমপিওভুক্ত স্কুল এবং কলেজ ১৮ হাজারের বেশি। আছে এমপিওভুক্ত অসংখ্য মাদ্রাসাও। এসব প্রতিষ্ঠানে ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তিতে এক লাখ ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষককে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ। যেখানে মাধ্যমিক স্কুলে সহকারি শিক্ষক ১১তম গ্রেডে আর কলেজে ৯ম গ্রেডে প্রভাষক। এনটিআরসিএ'র ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, ৯৬ হাজার ৭৩৬টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করেন মাত্র ২৩ হাজার ৯২৪ জন নিবন্ধনধারী।

একজন শিক্ষক বলেন, 'আমরা যখন সহকারি শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগদান করি, তখন আমরা ১১তম গ্রেডে আমরা প্রবেশ করি। যার বেসিক হলো ১২ হাজার ৫০০ টাকা। বাড়িভাড়া এক হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। এগুলো বৈষম্যের শিকার।'

অন্যদিকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক ৯ম গ্রেডে যোগদানের পর সবশেষ অধ্যাপক হিসেবে অবসর নিতে হয় ৪র্থ গ্রেডেই। ক্যাডার বৈষম্যে পদোন্নতির দীর্ঘসূত্রতা তো আছেই।

চাকরি পেতে প্রতিদিন নানারকম লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় প্রার্থীদের। তবে, অন্যসব পেশার চেয়ে শিক্ষকতা যেখানে নানা বৈষম্যে অবহেলিত, সেখানে এ পেশা নিয়ে কী ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিকাষার্থীরা?

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'এর থেকে ভালো অপশন তো আছে আমাদের কাছে। আমরা কেন শিক্ষকতা পেশায় যাবো? সরকার যদি এটা আরও উন্নত করতে পারে তখন হয়তো সবাই চিন্তা করে দেখবে।'

অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'শিক্ষা ক্যাডারে যদি যোগদান করে তার বেতন থাকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। কিন্তু যদি সেই ব্যাক্তিই প্রাইভেট সেক্টরে যায় তাহলে তার আয় আরও বেশি থাকতে পারে।'

শিক্ষকতায় আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো নিশ্চিত করে এ পেশাকে আকর্ষণীয় করে তোলার পরামর্শ তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআরের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, 'অর্থনৈতিকভাবে তারা কতটা সক্ষম? এই সক্ষমতার জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করে সেই জায়গা সমন্বয় করা প্রয়োজন। সকল পেশাতেই মেধাবীদের প্রয়োজন আছে। আমরা চাই তুলনামূলকভাবে যেন শিক্ষকতা পেশায় বেশি মেধাবীরা আসে। কারণ তারাই অন্যান্য প্রফেশনকে গড়ে তোলার কারিগর। সুতরাং সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক মর্যাদার জায়গাগুলো এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে যেন মেধাবীরা এই শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তারা সেখানে আসেন।'

দেশে বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষক প্রশিক্ষণের মান নিয়েও আছে প্রশ্ন। যোগ্যতা কিংবা দক্ষতাকে প্রাধান্য না দিয়ে অনেক সময়ই প্রশিক্ষক নিয়োগ পান বিশেষ বিবেচনায়। একইভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় কাউকে কাউকে। কার্যকর প্রশিক্ষণের অভাবে দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি বলেও মনে করেন ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিনা খাতুন।

তিনি বলেন, 'প্রশিক্ষণ শেষে তার অনেকগুলো সনদ জমা হয়েছে। কিন্তু আসলে তিনি শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী তৈরি করার ক্ষেত্রে, দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করার ক্ষেত্রে ওই প্রশিক্ষণের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছেন। এরকম আমি অনেকজনকে দেখেছি।'

দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট আছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের আরও পদ সৃষ্টিসহ সকল শূন্যপদ পূরণ করার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের।

এসএস