চোখের পলকে যেন আরেকটি গাজায় পরিণত হচ্ছে লেবানন। একদিকে যেমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল, অন্যদিকে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অনবরত হামলায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। কিন্তু হাসপাতালগুলো জায়গা দিতে পারছে না রোগীদের।
হাসপাতালের একজন নার্স বলেন, ‘এমন রোগীও হাসপাতালে আসছেন, যাদের জন্য করার কিছুই নেই । কারো হাত নেই, কারো পা নেই। এতো কষ্টের যে পাথরের চোখেও পানি আসবে।’
দক্ষিণাঞ্চলের দাহিয়েতে অনবরত ইসরাইলি বোমা হামলায় হাসপাতালগুলো আর নতুন রোগীকে জায়গা দিচ্ছেন না। কারণ ডাক্তার আর নার্সরা আসছেন না কর্মক্ষেত্রে। রাস্তাঘাট বন্ধ ও উপশহরটি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় হাসপাতালে হয়ে পড়েছে অকেজো।
রফিক হারিরি হাসপাতালের মহাপরিচালক জিহাদ সাদি বলেন, ‘ভয় হয় কখন এই হাসপাতালে হামলা করে বসে ইসরাইল । প্রতিদিনই দোয়া করি যেন নিরাপদে থাকতে পারি। দুশ্চিন্তায় কাজে মন দিতে পারি না । বুঝতে পারি না আমার কি হাসপাতাল ছেড়ে পরিবারের কাছে যাওয়া উচিত না এখানেই থাকা উচিত? সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, বাবা ছেলেকে খুঁজতে এসেছে। পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু টুকরা।’
বাধ্য হয়ে সব রোগীকে পাঠানো হচ্ছে বৈরুতের অন্য হাসপাতালে। যে কারণে সেই হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জায়গা দেয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। এতো রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে হাসপাতালের কর্মীরাও ভয়ে আছেন, কখন ইসরাইল এখানে হামলা করে বসে। রফিক আল হারিরি হাসপাতাল লেবাননের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল হলেও শেষ হয়ে আসছে ওষুধের মজুত।
জিহাদ সাদি বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছি। আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ, স্যালাইন, খাবার, পানি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত আছে ১০ দিনের। কিন্তু রাস্তাঘাট এভাবে বন্ধ থাকলে একটা সুইও বাইরে থেকে আনতে পারবো না। নিজেদের প্রস্তুত রাখলেও আমরাও মানুষ । সংকটে থাকলে আমরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারি না।’
প্রায় এক বছর ধরে গাজা উপত্যকায় সেনা অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল। পহেলা অক্টোবর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সেনাবহর পাঠিয়ে দেয় তেল আবিব। এরপর থেকে লেবাননেও চলতে ইসরাইলের রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযান। প্রাণ গেছে লেবাননের ২ হাজার সাধারণ মানুষের। যদিও তেল আবিবের দাবি, নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপদে দেশের উত্তরাঞ্চলে ফেরাতে লেবাননে চলছে সেনা অভিযান।