সূর্য ওঠার আগ থেকেই শতবর্ষী বাজিতপুর হাটে শাড়ি নিয়ে আসতে থাকেন তাঁতিরা। সপ্তাহে দু'দিন বসে কাপড়ের এই হাট। কিন্তু দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে হাটের এই জৌলুস। ক্রেতা সংকটসহ নানা কারণে আগের মতো জমছে না হাটটি। আসন্ন দুর্গাপূজাকে ঘিরে যে পরিমাণ ব্যবসা হওয়ার কথা ছিল তাও হচ্ছে না।
তাঁতিরা বলছেন, কয়েক বছর থেকেই বাজিতপুরের হাটে ব্যবসায় চলছে মন্দা। উৎসব ঘিরে হাটে ভালো বাণিজ্য হওয়ার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত পাইকার ও ব্যবসায়ী না থাকায় বিক্রি ভালো হচ্ছে না। কাপড় নিয়ে ফেরত যাচ্ছেন তাঁতিরা। নানা সংকটসহ ঋণগ্রস্ত হয়ে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে।
হাটে আসা একজন তাঁতি বলেন, 'আগে যে কাপড় হাজার বা এক হাজার ২০০ টাকা বিক্রি করেছি, এখন সেই কাপড়ই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছে। গত ৫ থেকে ১০ বছরের ভেতরে আমাদের তাঁতিদের অবস্থা খুবই খারাপ।'
বাঙালি নারীরা শাড়ির ব্যবহার কমিয়ে থ্রি-পিসসহ অন্যান্য পোশাকের ব্যবহার বাড়িয়েছে। দুর্গাপূজায়ও কমেছে শাড়ির চাহিদা। তাই বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। তবে পূজাকে কেন্দ্র করে কিছুটা হলেও বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।
একজন তাঁতি বলেন, 'আজকাল আমাদের নারীরা শাড়ি খুব একটা পড়ে না। অনেক ধরনের কাপড় আসছে সেগুলো এখন পড়ে। বিশেষ করে থ্রি-পিস বেশি পড়ে। আগে তো পূজার সময় সবাই শাড়ি পড়তো। এখন সেখানেও তারা অন্য কাপড়ই বেশি পড়ে।'
একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, 'বাজিতপুর হাট টিকিয়ে রাখতে হলে এই শিল্পের প্রতি নজর দিতে হবে। সরকারের দৃষ্টি দিতে হবে এখানে, লোনের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আগে হাট লোকে লোকারণ্য ছিল, এখন হাটে মানুষই নাই।'
বাজিতপুর হাটের ইজারাদার ফারুক ভূঁইয়া বলেন, 'এখানে যদি কটা ব্যাংক থাকে। আর হচ্ছে আবাসিক থাকে, হাট যদি সংস্কার করা হয়, তাহলে হাটটা হয়তো আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারে ইনশাআল্লাহ।'
হাটটির সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে তাঁতিদের সুদিন ফেরার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল হওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা।