মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইসরাইল-লেবানন ছায়াযুদ্ধের ৪০ বছর

গোপন অভিযান আর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে মোসাদ

ইসরাইল আর লেবাননের ছায়াযুদ্ধের ইতিহাস ৪০ বছরের। সাম্প্রতিক সময়ে তা জনসমক্ষে এসেছে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৬শ' মানুষ নিহতের পর। দুই দশকের মধ্যে এটাই লেবাননে তেল আবিবের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলা। হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের এই সংঘাতের জেরে দীর্ঘদিন ধরে গোপন অভিযান আর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদও।

নতুন করে সংঘাতের শুরুটা গেলো বছরের অক্টোবরে, যখন গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। তখন থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে একযোগে যুদ্ধে নেমে পড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুথি বিদ্রোহীরা।

তবে নতুন করে ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হলেও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা আর হিজবুল্লাহর মধ্যে ছায়াযুদ্ধের সূচনা হয় ৪০ বছর আগেই। ১৯৮০ সালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনকে নির্মূলে লেবাননে অভিযান চালায় ইসরাইল। তখন থেকে লেবাননে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। তাৎক্ষণিকভাবে ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগাইনাইজেশনকে (পিএলও) উৎখাতে সফল হয়নি আইডিএফ। এমনকি তারা আত্মসমর্পণেও অস্বীকৃতি জানায়।

সেসময় পিএলও'র ওপর হামলা করে বসে ইসরাইল। তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার পর সংঘাতে প্রাণ যায় ৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী ও লেবাননের সাধারণ মানুষের। তখন এই গণহত্যার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো ইরান সমর্থিত শিয়া যোদ্ধারা, যারা পরবর্তী সময়ে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীতে পরিণত হয়।

এই যোদ্ধাদের সমন্বয়ে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিজবুল্লাহ, তখন থেকেই ইসরাইলের শক্তিশালী শত্রু এই হিজবুল্লাহ। সেসময় থেকে গেরিলা যুদ্ধ কিংবা গুপ্ত হামলার মাধ্যমে ইসরাইলি বাহিনীকে অস্থির করে রেখেছিলো হিজবুল্লাহ। বৈরুতে যুক্তরাষ্ট্র আর ফ্রেঞ্চ সেনাঘাঁটিতে বোমা হামলার পাশাপাশি অনেক হামলাই সংগঠিত করে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী।

বিশাল নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় অর্থায়ন পায় হিজবুল্লাহ। এরমধ্যে রয়েছে লাতিন আমেরিকাও, যে কারণে দীর্ঘায়িত হয়েছে এই ছায়াযুদ্ধ। আর্জেন্টিনায় ইসরাইলি দূতাবাস ও ইহুদি কমিউনিটি সেন্টারে হামলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর ১৯৯০ সালে হিজবুল্লাহ নেতা আব্বাস আল মুসাউয়িকে হত্যা করে ইসরাইল। তখনই আলোচনায় আসে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর নাম। যদিও গোষ্ঠীটির লেবাননের রাজনীতিতে উত্থান হয় ১৯৯২ সালের গৃহযুদ্ধের পর।

তবে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদও সমানতালে সক্রিয় অবস্থানে। যে কারণে দুইপক্ষের উত্তেজনা কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়েছে। হিজবুল্লাহ আর ইরানের প্রভাবশালী নেতাদের হত্যায় দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছে মোসাদ। হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইমাদ মুঘনিয়েহ, যিনি ১৯৮৩ সালে লেবাননে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সহযোগিতায় ২০০৮ সালে দামেস্কে গাড়ি বোমা হামলায় হত্যা করতে সক্ষম হয় মোসাদ।

২০০৯ সাল থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির মধ্য দিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে হিজবুল্লাহ। শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, ছায়াযুদ্ধ চলেছে প্রযুক্তিখাতেও। ২০১০ সালে স্টাক্সনেট কম্পিউটার ভাইরাসের মধ্য দিয়ে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় সাইবার হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইল। সেই হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু প্ল্যান্টের সেন্ট্রিফিউজ।

সাম্প্রতিক সময়ে হিজবুল্লাহতে হাইটেক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই হামলা করেছে ইসরাইল। যেখানে যোগাযোগ যন্ত্র পেজার আর ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণে প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক মানুষের। এই হামলাকেও মোসাদের সুনিপুণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম। যদিও এ বিষয়ে এখনও কোন মন্তব্য না করে উলটো হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল।