মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইসরাইলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ'র জ্যেষ্ঠ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ'র জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলসহ অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। তারা ইসরাইলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করতে বৈঠক করছিলেন বলে দাবি করছে ইসরাইল। এমন পরিস্থিতিতে ১১ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইল হিজবুল্লাহ সংঘাত উত্তেজনা চরম পর্যায় পৌঁছেছে। এদিকে, ইসরাইল-হিজবুল্লাহ চলমান উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

লেবাননের বৈরুতে হিজবুল্লাহর 'এলিট ইউনিট' রাদওয়ান-এর সদস্যদের সাথে বৈঠক করছিলেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির শীর্ষ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিল। ঠিক সেই সময়ই ওই ভবনটিসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ইব্রাহিম আকিলসহ অনেকেই প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৈরুত ছাড়াও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলসহ বাকিদের হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তাদের দাবি ইসরাইলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করতে তারা বৈঠক করছিলেন নিশ্চিত হয়েই চালানো হয়েছে বিমান হামলা।

ইসরাইলী সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'তারা বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলো। সেইসঙ্গে ইসরাইলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করতে জড়ো হয়েছিল। আমরা হিজবুল্লাহ'র শীর্ষ কমান্ডারসহ যাদের নির্মূল করেছি তারা ৮ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের নাগরিকদের উপর আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলো। বর্তমানে হামলা আরও জোরালো করার পরিকল্পনা করছিল তারা।'

ইসরাইলি হামলায় শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিহতদের মধ্যে হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলকে নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা তুঙ্গে। ১৯৮৩ সালে বৈরুতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং মার্কিন মেরিন কর্পস ব্যারাকে চালানো হামলায় তাঁর ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওই দুই হামলায় ২৪১ মার্কিন সেনাসহ তিন শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। যার জেরে তার ব্যাপারে তথ্য দানকারী ব্যক্তিকে ৭০ লাখ ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ'র দ্বন্দ্ব তীব্র হবে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের। ইতোমধ্যেই লেবাননে ইসরাইলের এতো বড় প্রাণঘাতি হামলায় চরম পর্যায় পৌঁছেছে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ'র সংঘাত। গাজায় আগ্রাসনের জেরে ১১ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘাতে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে ওঠে, মূলত পেজার ও ওয়াকি-টকিসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম বিস্ফোরণে বহু হতাহতের পরও থেকে।

থেমে নেই হিজবুল্লাহও। ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো হচ্ছে পাল্টা হামলা। কাঁপছে ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত। বৃহস্পতিবার অন্তত একশটি রকেট লঞ্চারে ইসরাইলি বিমান হামলার জেরে শতাধিক রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। হামাস ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের এই সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমারি ডিকার্লো বলেন, 'আমাদের অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতিসহ বাকি সব জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্ত করা দরকার। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তাও বাড়াতে হবে। বর্তমানে শুধু লেবাননেই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ঝুঁকি আরও স্পষ্ট ও গুরুতর।'

এদিকে গত মঙ্গল ও বুধবার হিজবুল্লাহর বিভিন্ন ডিভাইস বিস্ফোরণে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহতদের দেখতে হাসপাতালে গেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।