দেশে এখন
0

চট্টগ্রামে মশক নিধন অভিযানের কার্যক্রম ভাটা, চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

ভাটা পড়েছে চট্টগ্রামে মশক নিধন অভিযানের কার্যক্রম। মেয়র, আর মাঠ পর্যায়ে কাউন্সিলররা পালিয়ে থাকায় এই অবস্থা। এরইমধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, এক তৃতীয়াংশ রোগী সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, নগরে প্রকৃতির সাথে তাল রেখে পাল্টে যাচ্ছে এডিস মশার জীবনচক্র। তাই মশার ওষুধ ও সরঞ্জাম কিনতে কোটি টাকা ব্যয়ের সুফল পেতে হলে গুরুত্ব দিতে হবে গবেষণায়।

সেপ্টেম্বরে হাঠাৎ চোখ রাঙ্গাচ্ছে ডেঙ্গু। অথচ কর্পোরেশেনের ওষুধ ছেটানোর কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ বছর আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যু ছিল মাত্র ৫ জন সেখানে মাঝ সেপ্টেম্বরেই মৃত্যু ৭। আর আক্রান্ত সাড়ে ৯ শতাধিকের প্রায় ৩ শতাধিকই এসেছেন সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে। আক্রান্তের মধ্যে, গ্রাম থেকে এগিয়ে নগর।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, 'নগরের বাকলিয়া, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী ও খুলশী এলাকায় আক্রান্ত হয়েছে বেশি। সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ৫৫ জন বাকলিয়ার, ৪৬ জন কোতোয়ালির, ৩৬ জন বায়েজিদের। উপজেলার মধ্যে বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেছে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালি ও পটিয়াতে।'

রোগীদের মধ্যে একজন জানান, দুপুর ২ টা থেকে জ্বর শুরু হয়। রাত ৮ টার দিকে জ্বর বেশি আসে।

পুরা শরীর শিরশির করে জ্বর আসতো বলেনও জানান আরো একজন রোগী।

চমেক হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগ বিভাগীয় প্রধান ডা. ম. আবদুস সাত্তার বলেন, 'সারা বছরই ডেঙ্গু কম বেশি থাকছে।এখন একটু প্রকপটা বাড়ছে।বিশষ করে যখন থেমে থেমে বৃষ্টি হয় তখন ডেঙ্গু বেড়ে যায়। নিচে একটা স্পেস রেডি করছি যেখানে ডেঙ্গু রোগী থাকবে।'

স্থানীয়দের অভিযোগ, যে হারে মশা বাড়ছে, করপোরেশন হাঁকডাক দিলেও, আদতে সে হারে ওষুধ ছিটাচ্ছেনা প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি গত বছর ক্রাশ প্রোগ্রাম, ড্রোন উড়িয়ে মশা শনাক্ত, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট, ও মশক নিধনে বিশেষ বাহিনী নিয়ে মাঠে নামলেও এবার তার কোনো নজির নেই।

কর্মকর্তারা বলছেন, 'রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে মশক নিধনেও। মেয়র, কাউন্সিলররা পালিয়ে থাকায় আগস্টে অনেকটাই স্থবির ছিলো কার্যক্রম। তাদের দাবি, এবার ঢাকঢোল না পিটালেও নিয়মিত কার্যক্রম চালানোর প্রচেষ্টা ছিলো তাদের। শিগগিরই শুরু হবে মোবাইল কোর্টও।'

ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি বলেন, 'কোন কোন এলাকাতে রোগির সংখ্যা বেশি সেগুলোকে সেটাকে টার্গেট করে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করবো।'

এই নগরে বেড়ে চলা নানা সংকট ও সমস্যার সাথে নতুন এক মাথাব্যাথার নাম- এডিস মশার বিস্তার।

গত কয়েক বছর এ মশা ঠেকাতে নানা ক্রাশ প্রোগ্রাম, মোবাইল কোর্ট বা সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হলেও এখনও এটি রয়ে গেছ দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে। এই মশার বংশ বিস্তারে অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, বা দূষণ এসব পুরোনো হিসেব তো আছেই। সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুর আর্দ্রতাসহ, এডিসের চরিত্র বদলের মতো নিত্য নতুন দুশ্চিন্তা। মশক নিধন কার্যক্রমে কোটি কোটি টাকার বাজেট, নতুন সরঞ্জাম ক্রয় বা প্রচলিত উপায়ে ওষুধ ছিটানো বা বিদেশ ভ্রমণকে স্রেফ অপচয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং মশা ঠেকাতে সবার আগে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়ার উপর জোর দিচ্ছেন তারা।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, 'সিটি করপোরেশনের দোষ দিয়ে লাভ কি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও কি রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। এই জায়গাতে উন্নতি করতে হবে।'

গত ৫ বছরে করপোরেশনে মশক নিধনে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও এর অধিকাংশই ব্যয় হয়েছে সরঞ্জাম, ওষুধ ক্রয় ও প্রচার প্রচারণায়, যেখানে উপেক্ষিত ছিলো গবেষণা এবং উন্নয়ন।