দেশের বৃহত্তম উন্মুক্ত জলাশয় চলনবিল। ১ হাজার ৮ বর্গকিলোমিটারের এই বিলে প্রতিবছর অন্তত দেড়শ' প্রজাতির ২০ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উদ্বৃত্ত মাছ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হয় শুঁটকি। বিলের পানি কমার সাথে সাথে বাড়ে শুটকির উৎপাদন।
নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংগইন এলাকায় প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুঁটকি উৎপাদন করতে আসেন অনেক উদ্যোক্তা। বিল পাড়েই ছোট ছোট চাতাল তৈরি করে বোয়াল,পুঁটি, শিং, টাকিসহ অর্ধশত প্রজাতির মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। যেখানে কাজের সুযোগ পান স্থানীয় নারীরা। তবে, এবার বিলে মাছের উৎপাদন কম হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ।
একসময় চলনবিলে মাছের প্রাচুর্য থাকায় বছরের ছয় মাস শুঁটকি উৎপাদন হতো। কিন্তু দিন দিন বিলে পর্যাপ্ত পানি না আসায় মাছ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে কমছে শুঁটকি উৎপাদনের পরিমাণও। বর্তমানে বছরের দুই থেকে তিন মাস শুঁটকি তৈরি করা হয়।
চলনবিলে প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত শুঁটকি মাছের চাহিদা দেশজুড়ে। তাই তো বিল পাড় থেকেই স্থানীয়দের পাশাপাশি শুঁটকি কিনে থাকেন বিভিন্ন জেলার মানুষ।
তাছাড়া পাইকারদের হাতে ধরে এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি পাঠানো হয় রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। তবে এবছর মাছ সংকটে বেড়েছে শুঁটকির দাম। প্রতিকেজি শুঁটকি প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মৎস্য বিভাগ জানায়, গত বছর চলনবিলে ৬১০ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় বৃষ্টি কম হওয়ার পাশাপাশি ঢলের পানি না আসায় আকারে বাড়তে পারেনি মাছ। তাছাড়া পানি সংকটে মা মাছ ডিম ছাড়তে না পারায় মাছের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে করে শুঁটকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা মৎস্য বিভাগের।
চলনবিলের মাছের ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। চলনবিলের পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে নদ-নদী খননের পাশাপাশি মা মাছ রক্ষায় প্রশাসন জোড়ালো ভূমিকা রাখলে বাড়বে মাছের উৎপাদন।