এশিয়া , উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

দেশের বাইরে শিশু দত্তক দেয়া বন্ধ চীনের

ভিডিও চ্যাটে মা-বাবাকে চিনে বড় হওয়ার চার বছর পর স্পর্শ পাওয়ার আগেই আটকে গেলো নতুন পরিবারের কাছে যাওয়ার পথ। কারণ হঠাৎই দেশের বাইরে শিশু দত্তক দেয়া বন্ধ করেছে চীন। টানা দুই বছর দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী থাকার পর নতুন এ পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।

১৯৯২ সালে প্রথমবার বহির্বিশ্বে শিশুদের দত্তক দিতে দুয়ার উন্মুক্ত করেছিল চীন সরকার। এরপর থেকে গেল তিন দশকে এক লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি চীনা শিশু পরিবার খুঁজে পেয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এদের মধ্যে প্রায় ৮২ হাজার শিশু, যাদের বেশিরভাগই মেয়ে শিশু, তাদের ঠিকানা হয়েছে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র।

৩২ বছর পরে এসে দেশের বাইরে শিশু দত্তক দানে ইতি টানলো চীন। এককালের কঠোর এক সন্তান নীতির অংশ হিসেবেই দেশটিতে শুরু হয়েছিল বিদেশে শিশু দত্তক দেয়ার প্রচলন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে আন্তর্জাতিক রীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সীমান্ত পেরিয়ে শিশু দত্তক দেয়ার নীতি বদলেছে বেইজিং। যদিও এরইমধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চীন থেকে শিশু দত্তক নেয়ার অপেক্ষায় থাকা পরিবার এবং তাদের কাছে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা শিশুসন্তানদের ওপর এ সিদ্ধান্তের প্রভাব কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন মাও নিং বলেন, 'কিছু ব্যতিক্রম বাদে ভবিষ্যতে দেশের বাইরে শিশুদের আর দত্তক দেবে না চীন। আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্নেহ ও সদিচ্ছা থেকে যেসব দেশ ও পরিবার চীনের শিশুদের এতোদিন দত্তক নিয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।'

চীন থেকে দত্তক নেয়া কন্যাসন্তান পেনেলোপ কবে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবে, সে অপেক্ষায় দিন গুণতে গুণতে চার বছরের বেশি সময় বছর পার করেছেন ওয়েলশ দম্পতি। বেইজিংয়ের নতুন সিদ্ধান্তে ভুক্তভোগীদের অন্যতম কেন্টাকির ল্যুইসভিলের এই পরিবার।

যুক্তরাষ্ট্রের দুই চীনা শিশুকে দত্তক নেয়া মা এইমি ওয়েলশ বলেন, 'বিগত বছরগুলোতে ভিডিও চ্যাটে তার সাথে যোগাযোগ করেছি। সত্যিই সৌভাগ্যবান আমরা। জন্মদিনে উপহারও পাঠাতে পেরেছি। পাঁচ বছর ধরে বাচ্চাটা আমাকে 'মা' ডাকছে। পাঁচ বছর ধরে আমার স্বামীকে 'বাবা' ডাকছে। ও যেখানেই যায়, সাথে করে একটা কম্বল নিয়ে যায়। ওই কম্বলে আমাদের পরিবারের ছবি আছে। ওর কাছে আমরাই ওর পরিবার। ও আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।'

২০১৭ সালে চীন থেকে প্রথমবারের মতো এক বছর বয়সী এক কন্যাসন্তানকে দত্তক নেন তারা। সন্তানের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা আর মেয়ের জন্য নতুন সঙ্গী আনতে চাওয়া থেকে ২০১৯ সালে আরেক সন্তান দত্তক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে শেষও করে ফেলেন ওয়েলশরা। নাম রাখেন পেনেলোপ, সে সময় তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। মাঝে করোনা মহামারির জেরে চীনের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার জেরে নতুন ঠিকানায় পেনেলোপের পা পড়েনি আজও।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অব দ্য ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর অ্যাডপশনের রায়ান হ্যানলন বলেন, 'সাড়ে চার বছর ধরে অপেক্ষা করছে বহু পরিবার। আমি আশা করবো যে এই পরিবারগুলোকে স্পষ্ট বার্তা দেবে চীন। এতে কিছুটা হলেও উপকৃত হবে তারা। কোনো বাস্তব ও বিকল্প ব্যবস্থা না করেই শিশুদের পরিবার পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।'

টানা দুই বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী থাকার জেরে চীনের এ নীতি পরিবর্তন। এর আগে গেলো মে মাসে বাইরের দেশ থেকে সন্তান দত্তক নেয়া নিষিদ্ধ করে নেদারল্যান্ডস, প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে ডেনমার্কেও।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৬ বছরের পুরোনো এক সন্তান নীতি বাতিলের পর এখন দেশের তরুণ দম্পতিদের বিয়ে ও সন্তান গ্রহণে উৎসাহদানে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীনা সরকার। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের জেরে ১৯৭৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশটিতে এক সন্তান নীতির কঠোর বাস্তবায়নের ভুক্তভোগী অসংখ্য পরিবার। ছেলেসন্তান বংশ এগিয়ে নিয়ে যায়, এমন ধারণা থেকে ছেলে সন্তানের জন্য মেয়ে শিশুদের দত্তক দিয়ে দিতেন চীনা অভিভাবকরা।

এসএস