ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাক্তা ইউনিয়নের বাসিন্দা, দুই সন্তানের জননী নার্গিস আক্তার। কৃষক স্বামীর একার রোজগারে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। বিয়ের পর থেকেই তাই গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি বাড়ির আশেপাশের পতিত জমিতে টুকটাক সবজির আবাদ করেন তিনি। সাশ্রয়ী হওয়ায় উঠানোর একপাশে ৩০০টি বস্তায় আদা চাষ করেছেন তিনি। জানান, গতবার শুধু নিজেদের চাহিদা মিটলেও, এবার কিছু বিক্রি করা সম্ভব হবে।
নার্গিস আক্তার বলেন, 'গেল বছর ২০ বস্তায় আদা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছিলাম। এবার ৩০০ বস্তায় আদা চাষ করছি।'
দিনে দিনে বস্তায় আদা চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ময়মনসিংহে। এই যেমন ফুলবাড়িয়ার হাতিলেট দিঘলচালা গ্রামের মিজানুর রহমান গত বছর ২ হাজার বস্তা আদা চাষ করলেও এবার করেছেন ৩ হাজার বস্তায়। গত বছর সবমিলিয়ে আড়াই লাখ টাকার আদা বিক্রি করেছেন। এবার বিক্রি আরো বাড়বে বলে জানান তিনি। বস্তা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা খরচ হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরাও ঝুঁকেছেন বস্তায় আদা চাষে।
একজন চাষি বলেন, ‘সবজি চাষে খরচ বেশি আর বস্তায় আদা চাষ করলে খরচে কম লাগে তাই আদা চাষ করছি। এতে ফলনও ভালো হচ্ছে।’
শুধু বস্তায় নয়, লেবু কিংবা পেঁপে বাগানেও সাথি ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে আদার। বর্ষাকালে লেবুর দাম কম থাকায় আদায় তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা কৃষকদের। জৈব এবং বেশ কয়েক পদের রাসায়নিক সার মিশিয়ে প্রতি বস্তায় লাগানো হয় ৪০ গ্রাম বীজ আদা। ১ বছর পর সেখান থেকে উত্তোলন করা যায় ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আদা।এদিকে আদা চাষ আরো বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষিবিভাগ।
ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়া উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মন্জুরুল হক বলেন, 'এবছর ব্যাপকভাবে আমরা আদা চাষ করেছি। আমি কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে ১২ হাজার বস্তা দিয়েছি। প্রতিটা ইউনিয়নে আদা চাষ করা হয়।'
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোছা. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, 'আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের টার্গেট দিয়েছিলাম ৫ হাজার বস্তা আদা চাষের। সেই ক্ষেত্রে কৃষকদের দিয়ে আমরা ৮ লাখ বস্তা আদা চাষ করতে পেরেছি।'
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন বলছে, দেশে বছরে ৩ লাখ টনের বেশি আদার চাহিদা রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদার উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার টন। মোট চাহিদার প্রায় ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশই আমদানি করতে হয়েছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে।
বর্তমানে খুচরা বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানিতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ভোলজা'র তথ্য মতে, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদা আমদানিকারক দেশ। প্রতি বছর দেড় লাখ টনেরও বেশি আদা আমদানি করে বাংলাদেশ। আদা আমদানিতে প্রথমস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তৃতীয় স্থানে আছে ভারত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আদার বাজার তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো।