মোটরপার্টসের রাজধানী যশোর

1

মোটরপার্টস ও মোটরসাইকেল পার্টসের রাজধানী বলা হয় যশোর জেলাকে। এখানকার ব্যবসায়ীদের আমদানি করা পার্টসই সারা দেশে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রায় ২ হাজার দোকানির ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে পার্টস খাতে। তবে ডলার সংকট, এলসিসহ নানা সমস্যায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা। তাই আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশিয় মোটর পার্টস উৎপাদনে সরকারের নজর দেওয়ার দাবি ব্যবসায়িদের।

সত্তরের দশকে যশোরের আরএন রোডে শুরু হয় গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা। তখন চিত্রা মোড়, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট ও রেলগেট এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু দোকান ছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে ব্যবসার সম্প্রসারণ হতে থাকে। পরবর্তীতে ২০০০ সালের দিকে আরএন রোডে স্থায়ীভাবে ব্যবসার প্রসার শুরু হয়। মোটরসাইকেল, মোটরগাড়ি ও কৃষি যন্ত্রাংশের অন্যতম বড় মোকামে পরিণত হয় এলাকাটি। বর্তমানে এখানে দুই হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কর্মচারীর।

প্রথম দিকে ভারত থেকে অবৈধ উপায়ে যন্ত্রাংশ এনে চলত ব্যবসা। বর্তমানে প্রায় আড়াইশ' আমদানিকারক ভারত, চীন, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ব্র্যান্ডের যন্ত্রাংশ আমদানি করছেন। এসব গাড়ির যন্ত্রাংশ ঘিরে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে এখানে।

মোটর সাইকেলের ব্যবহারকারি বাড়ায় এ খাতে ব্যবসায়ের বাজার বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

সারা দেশে মোটর পার্টসের চাহিদার ৬০ শতাংশ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেন যশোরের ব্যবসায়ীরা। তাদের তথ্যমতে দেশব্যাপী রিকন্ডিশনড মোটর যন্ত্রাংশ সরবরাহে ঢাকা, চট্টগ্রামের পরই যশোরের অবস্থান, থ্রি ও ফোর-হুইলারের খাতে চতুর্থ। গত ৫ বছরে বেনাপোল দিয়ে মোটর পার্টস আমদানি হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার।

ব্যবসায়ীরা জানান, 'যে দামে তারা পণ্য বিক্রি করছেন সে দামে কিনতে পারছেন না। তাই ব্যবসায়ের অবস্থা নাজুক।'

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক মো: রেজাউল করিম,'ভারত থেকে আমদানিকৃত গাড়ি ও মোটর সাইকেলের যন্ত্রাংশের বিধি মোতাবেক কাস্টমস কর্তৃক শুল্ক নির্ধারিত হয়। এবং এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী শুল্ক আদায় করা হয়।'

তবে ডলার সংকটে এলসি করতে না পারায় বিপাকে আমদানিকারকরা। অন্যদিকে পার্টসের দাম বাড়ায় কমেছে বেচাবিক্রিও।

যশোরে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে সকল প্রকার সহযোগিতা করার আশ্বাস দিলেন যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।

আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় মোটর পার্টস উৎপাদনে সরকারের নজর দেওয়ার দাবি ব্যবসায়ী নেতাদের।

মোটরসাইকেল/বাইকের যন্ত্রাংশের ব্যবসা নিয়ে বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর-FAQ

প্রশ্ন: যশোর আরএন রোড কেন বিখ্যাত?

উত্তর: এটি মোটরসাইকেল, মোটরগাড়ি ও কৃষি যন্ত্রাংশের অন্যতম বড় মোকাম হিসেবে বিখ্যাত। ২০০০ সালের দিকে এখানে স্থায়ীভাবে ব্যবসার প্রসার শুরু হয়।

প্রশ্ন: যশোরের আরএন রোডে কতগুলো দোকান আছে?

উত্তর: বর্তমানে এই এলাকায় দুই হাজারের বেশি গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকান রয়েছে।

প্রশ্ন: যশোরের মোটর পার্টস ব্যবসা কত টাকার?

উত্তর: এখানকার গাড়ির যন্ত্রাংশ ঘিরে হাজার কোটি টাকার (Thousand Crores) ব্যবসা হয়।

প্রশ্ন: আরএন রোডে কত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে?

উত্তর: এই ব্যবসায় প্রায় ২০ হাজার কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

প্রশ্ন: সারা দেশে মোটর পার্টসের কত শতাংশ যশোর সরবরাহ করে?

উত্তর: সারা দেশে মোটর পার্টসের চাহিদার ৬০ শতাংশ যন্ত্রপাতি যশোরের ব্যবসায়ীরা সরবরাহ করেন।

প্রশ্ন: যশোরের ব্যবসায়ীরা কোথা থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করেন?

উত্তর: প্রায় আড়াইশ' আমদানিকারক ভারত, চীন, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ব্র্যান্ডের যন্ত্রাংশ আমদানি করেন।

প্রশ্ন: বেনাপোল দিয়ে ৫ বছরে কত টাকার মোটর পার্টস আমদানি হয়েছে?

উত্তর: গত ৫ বছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২ হাজার কোটি টাকার মোটর পার্টস আমদানি হয়েছে।

প্রশ্ন: রিকন্ডিশনড মোটর যন্ত্রাংশ সরবরাহে যশোরের অবস্থান কত?

উত্তর: দেশব্যাপী রিকন্ডিশনড মোটর যন্ত্রাংশ সরবরাহে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরেই যশোরের অবস্থান (অর্থাৎ তৃতীয়)।

প্রশ্ন: থ্রি ও ফোর-হুইলার যন্ত্রাংশ সরবরাহে যশোরের অবস্থান কত?

উত্তর: থ্রি ও ফোর-হুইলার যন্ত্রাংশের খাতে যশোরের অবস্থান চতুর্থ।

প্রশ্ন: আরএন রোডে এই ব্যবসা কবে শুরু হয়?

উত্তর: সত্তরের দশকে (১৯৭০ এর দশকে) যশোরের আরএন রোডে গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু হয়।

প্রশ্ন: ব্যবসায়ীরা এখন কেন নিজেদের নাজুক অবস্থা বলছেন?

উত্তর: ডলার সংকটে এলসি (Letter of Credit) করতে না পারা এবং পণ্যের দাম বাড়ায় বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় তারা ব্যবসায়ের অবস্থা নাজুক বলে জানিয়েছেন।

প্রশ্ন: শুরুর দিকে কীভাবে যন্ত্রাংশ আমদানি করা হতো?

উত্তর: প্রথম দিকে ভারত থেকে অবৈধ উপায়ে (Illegal Means) যন্ত্রাংশ এনে ব্যবসা চলত।

প্রশ্ন: বেনাপোল স্থলবন্দর শুল্ক নির্ধারণের বিষয়ে কী বলছে?

উত্তর: স্থলবন্দর পরিচালক জানিয়েছেন, ভারত থেকে আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের বিধি মোতাবেক কাস্টমস কর্তৃক শুল্ক নির্ধারিত হয় এবং এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী তা আদায় করা হয়।

প্রশ্ন: যশোরের জেলা প্রশাসক ব্যবসায়ীদের কী আশ্বাস দিয়েছেন?

উত্তর: জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার যশোরে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে সকল প্রকার সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রশ্ন: ব্যবসায়ী নেতাদের মূল দাবি কী?

উত্তর: ব্যবসায়ী নেতারা আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় মোটর পার্টস উৎপাদনে সরকারের নজর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

tech