ময়মনসিংহের গৌরীপুরের খোদাবক্সপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা রাশিদা খাতুন। ভাঙা ঘরে চৌকিতে বসে প্রমত্তা নদের পানে উদাস নয়নে তাকিয়ে খোঁজেন জীবনের খতিয়ান। এই নদেই যে হারিয়েছে তার জীবন-জীবিকার অবলম্বন ভিটেমাটি-ফসলি জমি। সন্তানদের নিয়ে যে ঘরে বাস করতেন তাও নদে বিলীন।
রাশিদা বেগম বলেন, 'এই জীবনে সাতবার পর্যন্ত বাড়ি ভেঙ্গেছি। এখন আর বাড়ি ভাঙার উপায় নেই। একটু জায়গা নেই যে নদীপার থেকে সরে যাবো।'
শুধু রাশিদা খাতুন নয়, একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র পাড়ের হাজারো মানুষের। টানা ভারি বর্ষণের সাথে উজানের ঢলে আরো উত্তাল ব্রহ্মপুত্র। এর প্রভাবে বেড়েছে ভাঙনও। দুই বছর আগে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হলেও এবার ব্যাগসহ বিলীন হয়েছে নদে।
এক সময়ের বিপুল জমিজমার মালিক গেরস্ত অনেকেই এখন ভাঙনের কবলে পরে বাস্তুহারা। মানবেতর জীবনযাপন করলেও মিলছে না কোনো সহায়তা। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে উদ্যোগ না নিলে বিলীন হয়ে যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি। এ অবস্থায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
এলাকাবাসীদের একজন বলেন, ‘এখানে কয়েক হাজার বাড়ি রয়েছে। যদি দ্রুত নদীভাঙ্গন রোধ না করা যায় তাহলে আমাদের বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাবে।’
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাদের সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসন করা হবে বলেও আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, 'মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি যেন নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণেই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় বেশি ভাঙনপ্রবণ এলাকায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
ময়মনসিংহের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল বলেন, 'ভাঙন প্রতিরোধের জন্য আমাদের বোর্ডের যেই ডিজাইন আছে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।'
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের উজান কাশিয়ার চর, খোদাবক্সপুর, ভাটিপাড়া, ঈশ্বরগঞ্জের মরিচারচর, বটতলা এবং সদর উপজেলার অষ্টধার, সেনের চর ও ঝাপারকান্দা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন।