পরিবেশ ও জলবায়ু
0

বান্দরবানে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধস ও বন্যার আশঙ্কা

বান্দরবানে গত শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধস ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এনিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তার মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, জেলার ৭টি উপজেলাসহ জেলা শহরের শহরের টাংকি পাহাড়, বালাঘাটা, কালাঘাটা, ইসলামপুর, হাফেজঘোনা, বনরুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কয়েক লাখ জনগণের বসবাস। টানা বৃষ্টি হলেই এই সব এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এই পাহাড় ধসে গত ৫ বছরে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬৩ জনের।

এরমধ্যে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট বান্দরবান সদর উপজেলার কালাঘাটা, টংকাবতি, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও থানচিতে ১০ জন নিহত হয়েছিল। এছাড়া গত মাসের ২৯ জুন নাইক্ষ্যংছড়ির ফুলতলি এলাকায় কৃষি কাজ করতে গিয়ে আবু বক্কর (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

পাহাড় ধসে প্রাণনাশের ঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়েও মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া জেলার মাতামুহুরি ও সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া ও বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বান্দরবান পৌর মেয়র শামশুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রচারণা চালাতে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা শহরে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ।

বান্দরবান আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মন্ডল বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৭২ ঘণ্টা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বমোট ১০৮মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুপ চক্রবর্তী জানান, সাঙ্গু নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে রয়েছে, টানা আরও দুই- তিন দিন বৃষ্টিপাত হলে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন জানান, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে জেলার ৭ উপজেলায় ২১৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

অপরদিকে ভারি বৃষ্টি হওয়ার কারণে বান্দরবান-রুমা রোডের ধলিয়ান পাড়া এবং ১২ মাইলের মাঝামাঝি স্থানে প্রধান সড়ক পাহাড় ধসে মাটি পড়ে বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা মাটি সরানোর ফলে ছোট গাড়ি চলাচল করেছে।

এদিকে সড়কটি সচল করতে বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বান্দরবান জেলা ও রুমা উপজেলার দুটি ইউনিট একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুদিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে বান্দরবান-রুমা সড়কের দুটি স্থানে, আর এর ফলে রুমার সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

তবে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনীর ২৬ ইসিবির সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা কাজ করছেন। শিগগিরই সড়কটি আবার সচল করা সম্ভব হবে।