দেশে এখন
0

বর্ষার শুরুতেই আতঙ্কে পড়েন নদী তীরবর্তী মানুষ

বর্ষার শুরুতেই কুড়িগ্রামে আতঙ্কে পড়েন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। নানা অনিশ্চয়তায় কাঁপতে থাকে তাদের বুক। একদিকে চলে বন্যার হানা। অন্যদিকে পানি কমলে দেখায় ভাঙনের নির্মমতা। চোখের সামনে বিলীন হয় ভিটেমাটি, গাছপালা, জমি-জিরাত। বর্ষা আসে বর্ষা যায়- তবে বদলায় না নদী কপালিয়া মানুষের ভাগ্যের রেখা।

কুড়িগ্রামে তিস্তাপাড়ের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন। হু-হু করে বাড়ছে পানি। তলিয়েছে শতাধিক একর বাদাম খেত। ডুবে যাওয়া বাদাম উদ্ধারে কৃষকের শেষ চেষ্টা। নদীর মাঝখানের চর রামহরি, চর তৈয়বখার এখনকার দৃশ্য বড়ই বেদনার।

একই চিত্র বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, চতরা, কালির মেলা ও দাড়িয়ার পাড় এলাকার। গত কয়েক দিনে তলিয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। কোথাও আবার মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় শুরু হয়েছে তিস্তার ভাঙন। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব বেশকিছু পরিবার।

তিস্তার মতো ব্রহ্মপুত্রেও পানি বেড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামে ভাঙনের হুমকিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন ঠেকাতে ফেলা হচ্ছে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ। স্থানীয়রা যাকে বলছেন ভূতের ব্যাগার।

স্থানীয়রা বলেন, তারা সঠিকভাবে কাজটা করতে পারেনি। তাই নদী ভাঙছে। আর এখন তাড়াহুড়ো করে জিও ব্যাগ ফেলতেছে। যেভাবে বস্তা ফেলার কথা সেভাবে পড়তেছে না। বালুর বস্তা এনে রেখে দিয়েছে। তারা নাকি অর্ডার পায় নাই। তাই এতোদিনন ফেলে নাই।

নদী ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ছবি: এখন টিভি

কুড়িগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় তিস্তার দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাম তীরে মাত্র দেড় কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি অংশের পুরোটাই অরক্ষিত। এ অবস্থায় বন্যায় দুর্গতদের দুর্দশা নিরসনে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

তিনি বলেন, 'জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার মাধ্যমে অধিকতর সক্রিয় করা হয়েছে। চাল ও শুকনো খাবারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।'

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, 'ভাঙন রোধের জন্য আমরা জিও ব্যাগের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রেখেছি। ব্যাগগুলো সংগ্রহ করা হয়ে গেলে আমরা সরবরাহ করতে পারবো।'

মূলত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও জিঞ্জিরাম। আন্তঃসীমান্ত এই ৫টিসহ মোট ১৬টি নদ-নদী কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে হঠাৎ করেই বেড়েছে নদ-নদীগুলোর পানি। এরমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টের পানি।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, জেলায় বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের ডান ও বাম তীরে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ চলছে। আর তিস্তার বামতীরে ৩ দফায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজের জন্য সমীক্ষা শুরু হয়েছে মাত্র।