সিলেটের সীমান্ত উপজেলা কোম্পানিগঞ্জের থানা বাজারের ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ। চাল,ডাল ও আলুসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করেই তার সংসার চলে। কিন্তু প্রতিবছর অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হোন তিনি। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহূর্তেই ধলাইর পানিতে হারিয়ে যায় তার দোকানের মালামাল। একবারের ধকল কাটিয়ে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আরেকটি বন্যা তার কপালে চিন্তার ভাজ নিত্য দিনের।
তিনি বলেন, 'গত দুইবছর আগে আমাদের এই দোকানে বড় ক্ষতি হয়েছে। পানি উঠায় এবার চাল, ডাল ভিজে গিয়েছে। দোকানেও পানি বাসা বাড়িতেও পানি। কিছু জিনিস রক্ষা করতে পেরেছি।'
বিগত কয়েক বছরের বন্যার কাছে এভাবেই বার বার বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের মানুষকে। কেউ হারান তার পালিত পশু কেউ বা তার ঘরবাড়ি। বন্যায় দুর্ভোগ যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষের জন্য।
স্থানীয়দের একজন বলেন, 'বাড়িতে যা ছিলো তা তো তলিয়ে গিয়েছে। সেগুলো নেয়ার মতো নেই।'
আরেকজন বলেন, 'বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। রান্না-বান্না করতে পারছি না কিছুই। চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন পার করছে।'
এরিমধ্যে ২ দিনের বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের এলাকাসহ ১৩টি উপজেলার অন্তত ৮ লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন আর সুনামগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলাতে রাস্তাঘাট ডুবে পানি বন্দি রয়েছেন আরও ৭ লাখ মানুষ । এছাড়া মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যার পানির কারণে গৃহবন্দি রয়েছেন আরও অন্তত ২ লাখ মানুষ।
আরেকজন বলেন, 'সারারাত ঘুমাইনি শুধু পানি আর পানি। গরু- ছাগল নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসছি।'
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে আগামী ২ দিন ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে সিলেটে যার ফলে বন্যার তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
সিলেটের পাউবো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার বলেন, 'আগামী দুইদিন অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। আমাদের এখানের বৃষ্টি থেকে উজানের যে বৃষ্টিপাত সেটার প্রভাবে এখানে বেশি।'
এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে আকষ্মিক এই বন্যা মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। আক্রান্ত উপজেলাগুলোতে বন্যার্তদের উদ্ধার তৎপরতা সহ সার্বিক বিষয়ে নজর রাখছেন তারা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, 'প্রত্যেকটা ইউনিয়নে উপজেলা অফিসারকে ট্যাগ অফিসার করে দেয়া হয়েছে। হঠাৎ করে পানি চলে আসলে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে এই টিম যেন সার্বিকভাবে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।'
তবে সিলেটে বারবার এমন বন্যা ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্লেষককদের। তারা বলছেন সিলেটে প্রাকৃতিক জলাধার, খাল নালা পুকুর সহ নদনদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি সিলেটের। পরামর্শ যুগোপযোগী পরিকল্পনার ।
সিলেট শাবিপ্রবি'র সিইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, 'এই বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য যে পুকুর, জলাশয়, খালগুলো ছিলো সেগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে পানি সমতলে থেকে যাচ্ছে।'
এদিকে বন্যার সাথে সাথে সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বন্যার সাথে পাহাড় ধসের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপদে।