আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি

বাড়তি খরচে কিনে কমদামে জ্বালানি তেল বিক্রি করছে বিপিসি?

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাড়তি খরচে আমদানি করে তুলনামূলক কমদামে জ্বালানি তেল বিক্রি করতে হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। এতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি লোকসানের আশঙ্কা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। লোকসান কমাতে নতুন করে তেলের দাম সমন্বয়ের কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

দেশে চাহিদার বিপরীতে প্রতি মাসে পরিশোধিত-অপরিশোধিত মিলিয়ে মোট ১৭ থেকে ১৮ কার্গো জ্বালানি তেল আমদানি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রতিটি কার্গোতে গড়ে ৩০ হাজার টন তেল থাকে।

বিপিসির সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশ থেকে ৪ থেকে ৫ ধরনের ৫২ লাখ ৮৬ হাজার টন পরিশোধিত তেল কেনা হয়েছে। যার মূল্য ছিল ৫১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার বেশি। একই সময় অপরিশোধিত তেল কেনা হয়েছে ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৫ টন। যার মূল্য ছিল ১০ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার বেশি।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫০ লাখ টন পরিশোধিত ও ১৩ লাখ টন অপরিশোধিত মিলিয়ে মোট ৬৩ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করার কথা রয়েছে। এই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৫ লাখ টন সরবরাহ করছে বিপিসি। এদিকে সেচে তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় মে মাসে সরবরাহের পরিমাণ কম ছিল। তা সত্ত্বেও মে মাসের প্রথম ১১ দিনে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৬ টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করেছে সংস্থাটি।

বিপিসি যে তেল আমদানি করে থাকে এর মূল্য পুরোটাই শোধ করতে হয় ডলারে। সবশেষ এপ্রিল মাসে জ্বালানির তেল আমদানি করা হয়েছিল ডলারপ্রতি ১১০ টাকায়। গত ৩০ এপ্রিলে মে মাসের জন্য প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ১২৪ টাকার ৫০ পয়সা টাকা ও অকটেনের দাম ১২৮ টাকা ৫০ পয়সা টাকা নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

ডলারের দাম বাড়ার পর আমদানি করা বেশিরভাগ জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে বিপিসিকে ডলারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১১৭ টাকা। এতে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। আর তেল বিক্রি করা হচ্ছে তুলনামূলক কম দামে।

আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করেছে সরকার। এ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময়ের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চলমান গড়ের ভিত্তিতে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয়, সে সময়ের ডলারের গড় বিনিময় হার, শুল্ককর, বিপিসির মার্জিন বা লাভ, আনুষঙ্গিক ব্যয় যুক্ত করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

এরপরও ডলারের নতুন দামে পুরনো বকেয়া এবং বিল পরিশোধে বিপিসির ৫০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হবে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। গত ২০মে পর্যন্ত বিপিসির বৈদেশিক বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪০০শ মিলিয়ন ডলার। এর বাইরে আরও ২ শতাংশ বাড়তি দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

এদিকে লোকসান হলেও সামগ্রিকভাবে বিপিসিকে বড় চাপ নিতে হবে না বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান।

তিনি বলেন, 'যে এলসিগুলো বিপিসি এর মধ্যে করে ফেলেছে, তার জন্য অতিরিক্ত পেমেন্ট করতে হচ্ছে। এটা সঠিকভাবে বলা যায় না, তবুও আমরা একটা হিসাব করে দেখেছি প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো আসবে। বিপিসিকে সরকার একটা মার্জিন দিচ্ছে। গতবছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিপিসি লাভ করেছে।'

ডলারের দাম বাড়ায় তেলের দাম নতুন করে সমন্বয়ের কথা জানান বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, 'একটা হচ্ছে ৩ বা ৪ বছরের মধ্যে লাইফলাইন থেকে বেরিয়ে আসা, আর একটা হচ্ছে তিন বছরের মধ্যে একপারে চলে যাওয়া। কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। আমরা তো দাম নির্ধারণ ১১০ টাকা ধরে করেছিলাম। কিন্তু এখন তো ডলারের দাম ১১৭ টাকা। সেখানে আবার নতুন করে এডজাস্টমেন্ট করতে হবে।'

এখন পর্যন্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। এতে প্রতিবছর বাজেটে এ খাতে বড় বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।

আর আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিবহন খাতের পরেই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হবে এ খাতে। আগামী অর্থবছরে খাতটিতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা রয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৫ শতাংশের বেশি।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর