শনিবার (১ জুন) সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে ৬৭৬ আসনের 'বেতনা এক্সপ্রেস' নামে ট্রেনটি খুলনা থেকে ছেড়ে যায়। বেনাপোল জংশনে পৌঁছার পর সকাল ১০ টায় যাত্রী নিয়ে মোংলার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ট্রেনটি। খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত এটি 'বেতনা এক্সপ্রেস' নামে চলে। সেখান থেকে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে চলে 'মোংলা কমিউটার' নামে। মোংলা স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছায় দুপুর ২ টায়।
ঐতিহাসিক এ ট্রেন যাত্রায় যাত্রী হতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তারা। যাত্রীরা বলেন, মোংলার সাথে সমগ্র বাংলাদেশ কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার যদি যোগাযোগ থাকে তাহলে আমাদের বাণিজ্যে একটা নবদিগন্ত হবে। এ জনপদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যন্য এক উচ্চতায় যাবে। যাত্রীরা ভারতে যাতায়াতে অনেক সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
স্থায়ী জনবল নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালু করা হচ্ছে বলে জানান খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসেন মাসুম।
তিনি বলেন, 'এ অঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আজ পূরণ হয়েছে। এ রোড দিয়ে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে।'
বাঘেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, 'যখন থেকে মোংলা বন্দর চালু হলো তখন থেকেই আমরা রেললাইনের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি অনুভব করলাম। কম খরচে যাতায়াতের মাধ্যম রেলপথ।'
ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার। খুলনা থেকে ভোর সোয়া ৬টায় ছেড়ে বেনাপোলে পৌঁছবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এরপর বেনাপোল থেকে ছেড়ে ফুলতলা হয়ে মোংলা পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনালের প্রকৌশলী গিরিশচন্দ্র ত্রিবেদী বলেন, 'শেষ পর্যন্ত আজ থেকে রেলযাত্রা শুরু হলো। আশা করি সবকিছু ভালোই চলবে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে এ প্রকল্পের দিকে নিয়মিত নজর রাখার জন্য অনুরোধ করবো। কারণ আমরা এখান থেকে এবার বিদায় নেব।'
ভারত সরকারের ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা অর্থায়নে খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১০ সালে। প্রকল্পটি তিনটি ভাগে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ রেললাইন নির্মাণ, প্যাকেজ-২ রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু ও প্যাকেজ-৩ টেলিযোগাযোগ ও সিগন্যালিং সিস্টেম।
এসব প্রকল্পের আওতায় মূল লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬.৮৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৬৪.৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। আর রূপসা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৫.১৩ কিলোমিটার রেলসেতু।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি এই রেলপথ উদ্বোধন করেন। ঐ বছর ৩০ অক্টোবর ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়।