এশিয়া
বিদেশে এখন

'তাইওয়ান দখলে চীনের সক্ষমতা প্রদর্শন'

তাইওয়ান দখল করতে নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শনে দ্বীপরাষ্ট্রতি ঘিরে চীনের দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধের মহড়া চলছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে'কে শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি হিসেবে এ মহড়া। জবাবে নিজেদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রত্যয় জানিয়েছেন চিং-তে।

চীনের সামরিক মহড়া পর্যবেক্ষণে যুদ্ধবিমান, নজরদারি ড্রোন আর ভাসমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে তাইওয়ান। এর আগে তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে দায়িত্ব নেয়ার তিন দিনের মাথায় গতকাল (বৃহস্পতিবার, ২৩ মে) দ্বীপরাষ্ট্রটিকে ঘিরে 'জয়েন্ট সোর্ড ২০২৪-এ' নামে মহড়া শুরু করে চীনা সেনাবাহিনী।

এ পর্যন্ত চীনের ৪৯টি সামরিক উড়োযান, নৌবাহিনীর ১৯টি এবং কোস্ট গার্ডের সাতটি জাহাজ শনাক্ত করেছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রণালীর অলিখিত জলসীমা পার করে ২৮টি উড়োযান। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের (২৪ মে) প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী নিজেদের এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে টহল দিচ্ছে তাইপে'র বাহিনী, অনুসরণ করছে চীনের সেনাবাহিনীকে।

তাইওয়ান প্রণালী এবং চীনা উপকূলের কাছে তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি দ্বীপের আশপাশে দু'দিন ধরে যুদ্ধের মহড়া চালাচ্ছে বেইজিং। বিচ্ছিন্নতাবাদ ঠেকাতে লাই চিং-তে'কে শাস্তি দিতে এ মহড়া চালিয়েছে বলে জানিয়েছে চীনা প্রশাসন। একইসঙ্গে তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন বন্ধে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রকেও।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, 'তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাওয়া সব বিচ্ছিন্নতাবাদীকে করুণ পরাজয় বরণ করতে হবে। চীনের পূর্ণাঙ্গ পুনর্মিলনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মাথা গুঁড়িয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হবে। এদের প্রতি সমর্থন এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি।'

স্বায়ত্তশাসিত ও গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে করে চীন। শপথ নেয়ার পর তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্টের দেয়া ভাষণেই ক্ষুব্ধ হয় চীনা প্রশাসন। ভাষণে প্রণালীর দুই পাড়ের দুই দেশ কেউ কারও অধীনস্ত নয় বলে মন্তব্য করেন লাই চিং-তে। চীনকে হুমকি-ধামকি বন্ধেও আহ্বান জানান তিনি।

জবাবে নতুন প্রেসিডেন্টকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিয়ে যুদ্ধের মহড়া শুরু করে বেইজিং। যদিও এতে ভয় না পেয়ে নিজেদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিং-তে।

তিনি বলেন, 'বহির্শক্তির হুমকিকে উপেক্ষা করেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করে যাবো। ভবিষ্যতেও নিজেদের জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার এবং সেনাবাহিনীর সামগ্রিক কৌশল জোরদারে আমি কাজ করবো।'

নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে দুই পক্ষের প্রতিই আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে তাইওয়ানের ঘনিষ্ঠতম মিত্র ও সামরিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আহ্বান জানিয়েছে সহনশীল থাকার।

তাইওয়ানের ওপর রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্যের বার্তা দিতে চীনের মহড়া নতুন কিছু নয়। তাইওয়ানের দখল ধরে রাখতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের ওপরেও বারবার জোর দিয়েছে চীন সরকার। ১৯৪৫ সালে জাপানের কাছ থেকে তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তৎকালীন চীনা প্রজাতন্ত্র সরকার।

এরপর ১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধে সাম্যবাদী মাও সেতুংয়ের বাহিনীর কাছে হেরে পালিয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেয় চীনা প্রজাতন্ত্র সরকারের সেনারা। চীনের মূল ভূখণ্ডের মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ মেটেনি ৭৫ বছরেও। তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন বলে দাবি করলেও এতে স্বীকৃতি নেই চীনের।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর