সকাল হতে না হতেই অনেকে ভ্যান বেরিয়ে পড়েন নগরীর অলি গলি ও বাসা বাড়িতে, পুরানো প্লাস্টিকের সন্ধানে। পুরনো ভাঙ্গাচোড়া প্লাস্টিকের পণ্য কেনেন তারা। আমরা বিভিন্ন সময় প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ব্যবহার শেষে সেগুলো ফেলে দেই। অনেকে আবার সেগুলো সংরক্ষণ করে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেন এসব ফেরিওয়ালাদের কাছে। এসব পণ্য কোথায় যাচ্ছে, কিংবা এর বাজার মূল্য বা কত?
এসব প্লাস্টিক পণ্য কিনে খুচরা দোকানদারদের কাছে নিয়ে যান ফেরিওলারা। দ্বিতীয় ধাপে সেই এসব পণ্য প্রকারভেদে বেচা হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। শুধুমাত্র নগরী থেকেই নয়, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে সড়ক ও নৌ পথে আসে পুরোনো জিনিশপত্র। যেখানে কাজ করেন অসংখ্য শ্রমিক।
বাসাবাড়ি থেকে প্লাস্টিক পণ কিনছেন একজন ফেরিওয়ালা। ছবি: এখন টিভি
একজন ফেরিওয়ালা বলেন, 'এক হাজার টাকার পণ্য কিনি প্রতিদিন। মাঝেমধ্যে ভালো হয় আবার কোনো দিন কেনাই হয় না। বাসা বাড়ি থেকে, দোকান থেকে প্লাস্টিক কিনি। এসব কিনে দোকানে গিয়ে বিক্রি করি। আমরা ২০ টাকা করে কিনলে ২৫ টাকা করে বিক্রি করি।'
বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এসব প্লাস্টিক পণ্য আসে কারখানায়। যেখানে ঢুকলেই চোখে পড়বে ফেলে দেয়া সেই প্লাস্টিক নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। যা প্রকারভেদ ও রং অনুযায়ী আলাদা করা হচ্ছে। এসব প্লাটিক পণ্য পুনঃব্যবহারযোগ্য হবার পর প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
বরিশালে এমন রিসাইক্লিং কারখানা আছে ৬টি। এসব কারখানা থেকে প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ টন পণ্য ঢাকায় পাঠানো হয়। যার বাজারদর দেড় থেকে ২ কোটি টাকা।
বরিশাল প্লাস্টিক কাউন্টারের ম্যনেজার মো. ইউনুস খান বলেন, 'সরকার যদি কিছু টাকা আমাদের ঋণ হিসেবে দেয় আমরা এটা আরও ভালো করার চেষ্টা করবো।'
বরিশাল প্লাস্টিক কাউন্টারের মালিক মো. জহির বলেন, 'এ পণ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করি। এখানে নিম্নমধ্যবিত্ত ধরনের লোকেরাই মূলত কাজ করে। '
দেশে প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের হার দিন দিন বাড়ছে। এতে প্রকৃতি ও পরিবেশ যেমন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান রিফাত ফেরদৌস বলেন, 'প্রাকৃতিক যে ক্ষতিগুলো আছে অর্থাৎ নদী বা নালাতে প্লাস্টিক পণ্য বর্জ্য ফেলে আমরা যে সব সম্যা তৈরি করি সেগুলো থেকে আমরা যেমন রক্ষা পাব। একইভাবে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে। এবং অন্যভাবে আমরা বলতে পারি মানুষের যে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ তাও বৃদ্ধি পাবে।'
ফেলে দেয়া কিংবা নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করা সেসব প্লাস্টিক্লের পণ্যগুলো ২ থেকে ৩ হাত ঘুরে আসছে এসব প্লাস্টিকের কারখানায়। যেখানে এনে যেগুলো বিভিন্ন গ্রেডে ও রঙ অনুযায়ী বাছাই করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কাজ করছে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও। যার ফলে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
বরিশাল নগরীতে এসব প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ শ্রমিক। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি এই খাতে লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।