দেশে দেশে কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক কূটনীতি দূতাবাসগুলোর অন্যতম কাজ। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। যেসব দেশে বাংলাদেশের পণ্য বাজার শক্তিশালী নয় সেইসব দেশে দূতাবাসগুলোর কাজ করা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে নেই নিজস্ব ব্যবসায়ি উইং। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জোনগুলোতে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ গড়ে উঠলেও অন্যান্য দেশগুলোতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বা রপ্তানি পণ্যের বাজার ধরতে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো খুব একটা কাজ করা সুযোগ পায় না।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে ৮১টি দূতাবাসের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে দূতাবাসগুলো ভাড়া করা ভবনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। তবে পরবর্তীতে ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে ৩২টি মিশনের জন্য নিজস্ব ভবন নির্মাণ বা জমিসহ তৈরি ভবন ক্রয়ের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দূতাবাসগুলোর থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য না পাওয়াতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজার তৈরি হতে পারেনি।
বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের দূতাবাসগুলোর কোনো সহযোগিতা পায় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। কিছু দেশে দেখা যাচ্ছে আমাদের রপ্তানিকৃত পণ্যের পেমেন্ট বায়াররা দিচ্ছে না।'
বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর মধ্যে দূরত্ব রয়েছে স্বীকার করলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি বলেন, 'মন্ত্রণালয় যতগুলো মিশন রয়েছে তার মধ্যে অল্প সংখ্যক দূতাবাসে আলাদাভাবে কমার্শিয়াল সচিব রয়েছেন। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে লোকবল ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে।'
তবে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি দূতাবাস ও মিশনগুলোতে আলাদাভাবে কমার্শিয়াল উইং তৈরি নিয়ে নতুন করে কাজ করছে সরকার। এছাড়াও বিনিয়োগ বাণিজ্য কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়েও সরকারের প্রত্যেকটি আন্তঃবিভাগকে একসাথে করার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মহাপরিচালক সৈয়দ মুনতাসির মামুন বলেন, 'আমাদের সুবিধাগুলো আপগ্রেড করা হচ্ছে বর্তমান সময়ে যেটা দরকার। যেমন আইসিটির কাজ প্রায় আমরা করে এনেছি। আমাদের লোকবল ঘাটতি আছে যত অফিসার থাকার কথা তা নেই। যারা বিজনেসে আছেন তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।'
সব দূতাবাস বা মিশনগুলোতে কমার্শিয়াল উইং দেয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য বলে দাবি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর। তবে দূতাবাসগুলোতে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর নিয়োগ দেয়া নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের কমার্শিয়াল উইং কম আছে কিন্তু দূতাবাস আছে। যেখানে আলাদাভাবে কমার্শিয়াল উইং নেই সেখানে দূতাবাসগুলোই কাজ করছে। সব জায়গায় আসলে কমার্শিয়াল উইং দেওয়া সম্ভব না আমাদের স্কোপ লিমিটেড।'
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলো তাদের নিজ দেশের পণ্য অন্য দেশে বিনিয়োগ বা রপ্তানি বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফলও পাচ্ছে তারা। তবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে। আর ব্যবসায়ী, রপ্তানি বৃদ্ধি, দূতাবাস এসব কিছুকে এক সুঁতোয় মালা গাঁথতে হলে সরকারকেই সেই উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।
সিপিডি'র সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আমাদের যে রপ্তানি ওয়ান ভিলেজ, ওয়ান এক্সপোর্ট এইরকম নানান ধরনের উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি। সেইটার সাথে কমার্শিয়াল উইংকে সম্পৃক্ত করা এবং তাদেরকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া।'
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ শেষ হয়ে গেলেও দেশের প্রধান রপ্তানি যোগ্য পণ্যগুলো এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ।