১৫ এপ্রিল রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে সাভারের গেন্ডা বাসস্ট্যান্ড এলাকা। এলাকাবাসী দেখেন, আগুন জ্বলছে আদ্রিতা ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেইলার্স নামের একটি দোকানে। ঐ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় ১ জন। ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে জানায়, আগুনের সূত্রপাত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি থেকে।
এমন ঘটনার আরও সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। সুনির্দিষ্টভাবে এসির বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডে ঠিক কত জন আহত-নিহত হয়েছেন তার আলাদা কোনো হিসাব পাওয়া না গেলেও এ ধরণের খবর প্রায়ই শিরোনাম হয় গণমাধ্যমে। ২০২০ সালে এমন আগুনের ঘটনা ঘটে ৩২ বার, পরের বছরে তা বেড়ে হয় ৩৯। ২০২২ সালে এসিতে আগুনের ঘটনা ঘটে ৪৮টি। আর ২০২৩ সালে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৮৬।
এবছরও ঘটেছে এসি থেকে দুর্ঘটনা। গেল শুক্রবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে এসির ত্রুটি থেকে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে সেখানকার কার্ডিয়াক আইসিইউ ইউনিটের একাংশ। আতঙ্কে হাসপাতাল ছাড়েন রোগী ও স্বজনেরা।
তবে থেমে নেই ক্রেতাদের এসি কেনা। বাসাবাড়ি, কর্মস্থল বা প্রতিষ্ঠানে শরীর শীতল রাখতে এখন এসিই ভরসা। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে গিয়ে ক্রেতারা ভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য কিনছেন। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন অনেকেই। বিক্রেতাদের দাবি, মানহীন এসি বিক্রি করেন না তারা।
তারা বলেন, কিছু আছে নন ব্র্যান্ড এসি। নাম নাই একেবারে নিম্নমানের। এগুলোতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। আর কম দামের এসি নিলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকবেই। নন ব্র্যান্ড এসিগুলো বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়া উচিত।
এ ব্যাপারে চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তারা বলছে, সাধারণ অবস্থায় এসি বিস্ফোরণের কোন সুযোগ নেই। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার ও ভোল্টেজের ওঠা-নামার কারণে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া কমপ্রেসারের ত্রুটিতে জমে থাকা গ্যাস, যন্ত্রাংশে নানান সমস্যায় তাপ সৃষ্টি হয়ে এসি আগুনের সংস্পর্শে এলেও বিস্ফোরণ ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, 'আশা করি বাংলাদেশে এমন কোন এসি নাই যেটা নিজ থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে। এসির ভেতরে যে যন্ত্রাংশগুলো থাকে সেগুলো দীর্ঘসময় সাপোর্ট দেয়ার জন্যই থাকে। কিন্তু আমরা সার্কিট বোর্ডসহ পারিপার্শ্বিক দিকগুলো ফলো করি না।'
এসিতে ব্যবহার করা হয় রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক কুমার মজুমদার জানান, নিম্নমানের ও দাহ্য গ্যাস ব্যবহারের ফলে কম্প্রেসারে লিকেজ তৈরি হতে পারে। তাই যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহারকারীদের আরও সচেতন হবার পরামর্শ তার।
এসিতে ভালো মানের যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
তিনি বলেন, 'এখানে গ্যাসের অনেকগুলো ক্যাটাগরি আছে। এর মধ্যে রীতিমতো আগুন ধরে যাবার মতো গ্যাসও আছে। সুতরাং এ গ্যাসের এসির অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলো উৎকৃষ্টমানের হতে হবে। স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী চেক করতে হবে। যেন কোন অবস্থাতেই এটা লিক করার সুযোগ না পায়।'
এদিকে বিস্ফোরণের আগুনে দগ্ধ হয়ে অধিকাংশ রোগী পোড়া শ্বাসনালী নিয়ে ভর্তি হন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে। এমন রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি বলে জানান হাসপাতালের সহকারী পরিচালক হোসাইন ইমাম ইমু।
তিনি বলেন, 'যারা এ ধরণের অগ্নিকান্ডের শিকার হয় তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পুড়ে যায়। এর ফলে তৈরি হওয়া ঝুঁকিগুলোকে মোকাবেলা করা মাঝে মধ্যে খুব কঠিন হয়ে পড়ে।'
বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেও তা যেন দুর্ঘটনার কারণ না হয় সেজন্য নিতে হবে বাড়তি সর্তকতা। একইসাথে নিম্নমানের যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিক্রি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।