ভূপ্রকৃতি, সবুজ বনভূমি ও জাতিগত বৈচিত্র্যতার কারণেই পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় কক্সবাজারের পরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থান। এই তিন জেলায় সারা বছর যে পরিমান পর্যটক ঘোরাফেরা করেন, তার একটা বড় অংশ যায় ঈদের ছুটি কাটাতে।
পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বান্দরবান। প্রতি ঈদে তিন জেলায় প্রায় ২শ' কোটি টাকা ব্যবসার অর্ধেকেই হয় এখানে। অথচ গেল দুই বছরের অধিকাংশ সময়ই ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল বান্দরবানে। তাতে প্রায় পর্যটক শূন্য দেশের এই সবুজ ছাদ।
আশা ছিল এবার ঈদে মিলবে কাঙ্ক্ষিত পর্যটকের দেখা। ঈদুল ফিতর আর বৈশাখ মিলে লম্বা ছুটিও ছিল। বুকিং ছিল বান্দরবানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের প্রায় ৮০ ভাগ কক্ষ। অথচ আশায় গুঁড়েবালি। ঈদের মাত্র সপ্তাহ খানেক আগেই কেএনএফর নৈরাজ্যে ফের অস্থির বান্দরবান।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকে পর্যটকই নিরাপত্তাহীনতায় বান্দরবানের হোটেল বুকিং বাতিল করেছেন। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বান্দরবানের পরিস্থিতি কক্সবাজারসহ দেশের সামগ্রিক ঈদ পর্যটনে প্রভাব ফেলবে। ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সন্তোস কুমার দেব বলেন, 'যাদের পাঁচ দিনের ট্যুর প্যাকেজ ছিল সেটা কমে এখন তিন দিনে চলে আসবে। অনেকের ক্ষেত্রে এমন হবে কক্সবাজার ঘুরে আবার ঢাকায় ফেরত আসবে। সামগ্রিকভাবে যদি বলি ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে পর্যটনের যে জিডিপি অবদান ছিল দেশে সেটা কমে যাবে।'
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মো. জিয়াউল হক হাওলাদার বলেন, 'পর্যটন খাত থেকে প্রচুর আয় হয়। বলা যায় ঈদের সময় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা আয় হয়ে থাকে।'
দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা না গেলে তৈরি হতে পারে আস্থার সংকট। তাতে স্থায়ীভাবে পর্যটক হারাতে পারে বান্দরবান।
ড. সন্তোস কুমার দেব আরও বলেন, 'পর্যটন উন্নয়নে অন্যতম পূর্বশর্ত হলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পর্যটকদের মনে নিরাপত্তার আস্থা সৃষ্টি করা।'
কৌশলগত শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের পরামর্শ নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। এজন্য স্থানীয়দের সমর্থন আদায়েরও পরামর্শ তাদের। তবেই পর্যটক পাবে পাহাড়ি এলাকায়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, 'এক দিকে শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে এই সমস্যার একটা রাজনৈতিক সমাধান খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীদেরকে আমাদের পক্ষে আনার চেষ্টা করতে হবে।'
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামে সংযোগ সড়ক যেটা হচ্ছে তার কাজ শেষ হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের বিপ্লব ঘটবে।'
প্রতি বছর ঈদ ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছুটি কাটাতে যায় প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ ভ্রমণপিপাসু। বান্দরবানের ঘটনায় তাই পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তার দাবি খাত সংশ্লিষ্টদের।