কন্টেইনারবাহী ৯৪৮ ফুট দীর্ঘ জাহাজটির নাবিকরা যখন বুঝলেন যে কী ঘটতে যাচ্ছে, ততক্ষণে আর কিছুই করার নেই। ২৭ দিনের যাত্রার শুরুতেই দৈত্যাকৃতির জাহাজের ধাক্কায় খড়কুটোর মতো মুহূর্তে ভেঙে পড়ে শহরের ঐতিহাসিক ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজ।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৫ মার্চ) মধ্যরাতে ডালি নামক জাহাজটির নাবিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন হঠাৎ সব আলো নিভে যাওয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর থেকে শ্রীলঙ্কাগামী জাহাজটি বন্দর ছাড়ার পরপরই হঠাৎ অচল হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন, সাড়া দিচ্ছিল না জাহাজের ইঞ্জিনও। ত্রুটি সারিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে সামনে থাকা সেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়ে সতর্ক সংকেত দেন নাবিকরা।
যুক্তরাষ্ট্র মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ওয়েস মুর বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি যে অনেকগুলো গাড়িকে সেতুতে ওঠার পথে আটকানো সম্ভব হয়েছে। এতে অনেক প্রাণ বেঁচেছে। সংশ্লিষ্টদের বীরোচিত ভূমিকায় এটি সম্ভব হয়েছে।'
জাহাজের ধাক্কায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু ভেঙে কয়েকটি গাড়ি প্যাটাপস্কো নদীতে পড়ে নিখোঁজ কয়েকজনের মৃত্যুর আশঙ্কা করছে প্রশাসন। নিখোঁজ ব্যক্তিরা প্রতিবেশী মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের নাগরিক। জাহাজের ২২ নাবিকের সবাই ভারতীয়। জাহাজটি অচল হওয়ার কারণ জানা যায়নি।
এদিকে, ৪৭ বছরের পুরনো সেতুটির এমন নাটকীয় পরিণতিতে সমালোচনার মুখে প্রশাসন। সেতুটি পুনঃনির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি বলেন, 'সেতু পুনঃনির্মাণের সম্পূর্ণ খরচ কেন্দ্রীয় সরকার যেন বহন করে, তা নিশ্চিত করতে চাই আমি। আশা করি, এ চেষ্টায় কংগ্রেসের পূর্ণ সহযোগিতা পাবো।'
মিলান পলিটেকনিকের বিশেষজ্ঞ গিয়ামপাওলো রোজাতি বলেন, 'সেতুটি আয়ুষ্কালের অর্ধেকে পৌঁছে গিয়েছিল। নৌপথে ছোটবড় অসংখ্য জাহাজ আর সেতুতে যান চলাচলের ব্যাপ্তি বিবেচনায় সেতুটির নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ আরও আগেই নিশ্চিত করা উচিত ছিল।'
দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটিতে কমপক্ষে তিন হাজার পণ্যবোঝাই কনটেইনার ছিল। নিখোঁজদের সন্ধানে নদীর এপার-ওপার নৌকা নিয়ে চষে বেড়াচ্ছে পুলিশ। হেলিকপ্টার থেকে জীবনের চিহ্ন শনাক্তে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের পাশাপাশি দু'টি অত্যাধুনিক ইউএইচ সিক্সটি ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার নিয়ে ঘটনাস্থলে রয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনীও।
অন্যদিকে, সেতুতে ধসের পর থেকে বন্ধ রয়েছে বাল্টিমোর বন্দরে জাহাজের আনাগোনা। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম থেকে শুরু করে কৃষি সরঞ্জাম, জেনারেল মোটরস ও হোন্ডার মতো অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও কাঁচামাল আনা নেয়ায় আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটি। প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জীবিকা বন্দরটির ওপর নির্ভরশীল।