সন্দেহজনক গণভোটের মধ্য দিয়েই পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের জন্য এই জয় প্রমাণ করছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযানে রয়েছে দেশবাসীর পূর্ণ সমর্থন। নির্বাচনে ৮৭ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে পুতিন বলছেন, রাশিয়ানরা এক সম্মিলিত পরিবার।
তবে গবেষকরা বলছেন, রাশিয়ানদের মধ্যে দ্রুতই বিরোধ তৈরির শঙ্কা আছে। কারণ পুতিন ক্ষমতায় থাকার জন্যই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচনের ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
ছাতাম হাউজের জ্যেষ্ঠ গবেষক নাটালি সাবানাদজে বলেন, 'সারাদেশে অবরোধ হতে পারে। স্টালিনের মতো পুতিনও যুদ্ধ লাগিয়ে রাখছে, নিজে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। সবাই জানে এটা আসল দৃশ্যপট নয়। পুতিন সারাবিশ্বের নির্বাচন দেখছেন। তিনি জানেন, এটা আসল নির্বাচন নয়। স্বৈরাচারদের দুইমুখী তলোয়ার থাকে। রাশিয়া যথেষ্ট সর্তক অবস্থানে। কিন্তু মিথ্যা এখানে দৃশ্যমান।’
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাতাম হাউজ বলছে, ২০০০ সালেও যখন পুতিন জয়ী হয়েছিলেন, তার ভোট ছিলো ৫২ শতাংশ। এই নির্বাচন নিঃসন্দেহে বিশেষ কিছু। ভ্লাদিমির পুতিন ওয়াশিংটনের ক্ষমতার পালাবদলের অপেক্ষায় আছেন। এরপর অনেক কিছুই সম্ভব, কারণ রাশিয়ার লক্ষ্য ইউক্রেন নয়, ন্যাটো। এই জোটের দুর্বলতা প্রকাশ করতে পুতিনের চাই- উপযুক্ত সময়।
নাটালি সাবানাদজে বলেন, 'অনেক ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা হয়েছে। অন্য যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় পরিকল্পিত। রাশিয়ার মনের অবস্থা প্রকাশ করা ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যান্য দেশে মানুষ লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিচ্ছে। কিন্তু রাশিয়ার শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মজীবীসহ সবার জন্য পোলিং স্টেশনে না আসার কড়া নির্দেশনা ছিল।'
রুশ নির্বাচনকে পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন খোদ রাশিয়ার এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তার দাবি, প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় এমন নির্বাচন হয়েছে, যেখানে মাত্র তিনজন প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পুতিন ছাড়া বাকি দুইজন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সেটা বলার সাহসও পাননি। নামমাত্র তাদের অংশগ্রহণ ছিলো ব্যালটে। এছাড়া, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। ২০১৮ সালের তুলনায় হঠাৎই ভোটার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে, যা সন্দেহজনক।
ভোট গণনার সময়। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী একাতেরিনা শুলম্যান বলেন, 'কেন্দ্রীয় এশিয়ার যাদের স্বৈরাচার বহাল আছে, সেসব দেশে এই নির্বাচনে সাধারণ বিষয়। এই নির্বাচনে শুধু ব্যতিক্রম ছিল রাশিয়ার দুই দশকের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন। খেলায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আরোপিত এই পদ্ধতিতে নির্বাচনই তো পরিচালনা করার কথা না। গণভোটের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই পদ্ধতির কোন সর্বসম্মতি নেই। এই পদ্ধতি তো রাশিয়ার আইনের সঙ্গেই যায় না।'
২০২৪ সালের নির্বাচনে রুশ অধ্যুষিত নতুন অঞ্চলগুলো থেকে ভোট এসেছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন জানায়, এই বছর ৪৬ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন। রাশিয়ার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, এমন এলাকা থেকেও ভোট এসেছে। ২০১৮ সালেও ক্রিমিয়ায় ভোট হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে, যা অনৈতিক। কিন্তু চলতি বছর যে নতুন অঞ্চলগুলোতে ভোট হয়েছে, সবগুলোই রাশিয়ার নতুন অধ্যুষিত।
একাতেরিনা শুলম্যান বলেন, 'বিষয়টা খুবই সাধারণ, পুতিন এভাবে প্রেসিডেন্ট হতে পারে না। সবচেয়ে ছোট ব্যালট ব্যবস্থা দেখেছি এবার, সোভিয়েত আমলের পর। মাত্র তিনটি সংসদীয় দল ছিল। যাদের খুব সাবধানে নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবে না জেনেই। এই ফলাফল রাশিয়ার স্বার্থে নয়। ভ্লাদিমির পুতিন যতো জনপ্রিয় হোক, তার দেশ চালানোর অধিকার নেই। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ মানুষ ইউক্রেনে সেনা অভিযান স্থগিতের পক্ষে।'
নির্বাচণে জয়ী হওয়ার পর পুতিনের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
রুশ স্বাধীন ভোট তদন্তকারী দল জানিয়েছে, এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ভ্লামিদির পুতিন, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আর প্রতারণার নির্বাচন। সমালোচকরা বলছেন, একজন নেতার আত্নবিশ্বাস ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাস বিপজ্জনক। কারণ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোন স্থিতিশীলতা নেই।