বিদেশে এখন
0

পরিবহন খরচ বাড়ায় বিপাকে বড় বড় শিপিং প্রতিষ্ঠান

লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা আর পানামা খালে খরা, দুইয়ে মিলে বাড়তি খরচের মাশুল গুণতে হচ্ছে বড় বড় শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিশ্বের প্রধানতম বাণিজ্যিক নৌপথগুলোতে এক বছর আগের তুলনায় ৭১ থেকে ১৫০ শতাংশের বেশি পরিবহন খরচ বেড়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল এবং পারস্য উপসাগরীয় বন্দরগুলোতে শ্রমিক ধর্মঘটের শঙ্কাও বাড়ছে।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হাপাং-লয়েড। জার্মানিভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি গেলো বছর নিট মুনাফায় বড় ধরনের পতন দেখেছে বলে জানা গেছে। তাই বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ কমিয়ে দেয়ায় পুঁজিবাজারেও প্রতিষ্ঠানটির দর কমেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি'র প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে লাভ কমে গেলেও এটি ছিল প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে তৃতীয় সেরা বছর। বন্দরে পণ্যজট আর সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গেলো বছর প্রত্যাশার চেয়ে কম লাভ করেছিল হাপাং-লয়েড। লোহিত সাগর সংকটে জাহাজে পণ্য পরিবহন খরচ ক্রমশ বাড়তে থাকায় চলতি বছরও আয় অনেকটা কমবে বলে শঙ্কা প্রতিষ্ঠানটির।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান সোনারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৩ জানুয়ারি থেকে ৪০ ফুট কন্টেইনারের খরচ বেড়ে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৮শ' ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ভাড়া ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি, পাঁচ হাজার ৩শ' থেকে সাত হাজার ৩শ' ডলারের বেশি। সম্প্রতি ভাড়া কিছুটা কমলেও এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকায় পণ্য পৌঁছাতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৭১ থেকে ১৫৫ শতাংশ বেশি খরচ গুণতে হচ্ছে।

লোহিত সাগরে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক নৌপথকে লক্ষ্য করে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা চলছে প্রায় চার মাস ধরে। এ অবস্থায় বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে হর্ন অব আফ্রিকা রুট বেছে নিয়েছে বড় বড় শিপিং প্রতিষ্ঠান। তবে এ পথে সময় বেশি লাগছে বলে একদিকে জাহাজ সংকটে বন্দরে বাড়ছে পণ্যজট, আরেকদিকে পুড়ছে বাড়তি জ্বালানি তেল। ফলে পরিবহন খরচও বাড়ছে।

সি-ইন্টেলিজেন্সের তথ্য, লোহিত সাগরের বদলে আফ্রিকা ঘুরে যাওয়া এসব জাহাজ থেকে ২৬০ থেকে ৩৫৪ শতাংশ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ বাড়ছে। এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এমিশন ট্রেডিং সিস্টেমের আওতায় ইউরোপগামী জাহাজের জন্য সংশ্লিষ্ট শিপিং প্রতিষ্ঠানকে গুণতে হবে বাড়তি ক্ষতিপূরণ।

এমন পরিস্থিতিতে বিলম্বিত যাত্রা ও কন্টেইনার আটকে থাকার ক্ষতি কিছুটা কমানোর লক্ষ্যে জাহাজের ধারণক্ষমতা পাঁচ শতাংশ বাড়িয়েছে বিভিন্ন ওশ্যান ক্যারিয়ার। জাহাজ চলাচলের গতিও স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে বলে সক্ষমতার ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেশি পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে।

অন্যদিকে, লোহিত সাগরে বিঘ্নের পাশাপাশি খরার কারণে পানামা খালেও জাহাজ চলাচলে রয়েছে বিধিনিষেধ। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় ১৪ অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন বন্দর ও পারস্য উপসাগরীয় বন্দরগুলোতে শ্রমিক ধর্মঘটের শঙ্কা বাড়ছে। এরইমধ্যে পূর্ব উপকূলগামী অনেক জাহাজ বিঘ্ন এড়াতে পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলোতে ভিড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলতি বছর নৌপথে সর্বোচ্চ পণ্য পরিবহনের মৌসুম আগামী জুনে শুরু হতে পারে।