ইসরাইলকে এড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য সফর। যেখানে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির আলোচনায় অগ্রগতির ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এতেই যেন সব ক্ষোভ গাজাবাসীর ওপর উগড়ে দিচ্ছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
ট্রাম্পের চার দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফরে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি। গেল দুদিন প্রাণহানি ছাড়িয়েছে শতকের ঘর। এতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর নিহত অন্তত ৫৩ হাজার। ইসরাইলি গণমাধ্যম মারিভের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার প্রতি চার মিনিট পরপর একবার বিমান হামলা চালিয়েছে আইডিএফ।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর দাবি, অপারেশনস গিডিয়নস চ্যারিয়টের প্রাথমিক ধাপের অংশ হিসেবে বাড়ানো হয়েছে হামলার তীব্রতা। মূলত গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখলের জন্য পরিচালিত হচ্ছে এই অভিযান। যা চলবে হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত।
এদিকে হুতিদের হামলার জবাবে শুক্রবার ইয়েমেনের হোদেইদাহ ও আস সালিফ বন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এসময় ১৫টি ফাইটার জেট নিক্ষেপ করেছে ৩০টি বোমা। প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এটি কেবলই শুরু। হুথি প্রধানকে হত্যার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি অভিযানের শুরু মাত্র। সামনে এমন আরও অভিযান পরিচালনা করা হবে। হামাস ও হিজবুল্লাহ প্রধানকে যেভাবে নিঃশেষ করা হয়েছে, আব্দুল মালিক আল হুতির জন্যেও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে। ইসরাইলকে রক্ষায় যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করা হবে।’
এদিকে ১০ লাখ গাজাবাসীকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনায় কাজ করছে ট্রাম্প প্রশাসন। সম্প্রতি এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে হইচই ফেলে দিয়েছে এনবিসি নিউজ। মার্কিন গণমাধ্যমটির দাবি, ফিলিস্তিনিদের গ্রহণের বিনিময়ে আটকে রাখা কয়েক বিলিয়ন ডলার তহবিল ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করছে অসংখ্য ফিলিস্তিনি। তাদের সহায়তা প্রয়োজন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী, জিম্মিদের বিনিময় চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে কী না, সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি উল্লেখ করেন, সিরিয়ার আল শারা সরকারকে স্বীকৃতি ও দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে কথা হয়নি ইসরাইলের সঙ্গে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘দেখা যাক সামনে কী হবে। আমার মতে মতে ভবিষ্যতে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে হবে। আপনারা জানেন অনেক ফিলিস্তিনি ক্ষুধায় দিন পার করছে। তাই আমাদের দুই দিকই দেখতে হবে। যদিও আমরা ভালো কাজ করছি।’
জাতিগত নিধনের অংশ হিসেবে গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরাইল, এমন অভিযোগ জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের। অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দাবি, উপত্যকার পরিস্থিতি অসহনীয়।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘মার্চের আগ পর্যন্ত মানবিক রুট গুলো সচল থাকার কারণে আমরা সহায়তা পাঠাতে পেরেছি। অস্ত্রকে নীরব রেখে আহতদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়েছে। খাদ্য, ওষুধ কিংবা পানি, সবকিছুই পৌঁছেছে। যদিও এগুলোর কিছুই এখন সম্ভব নয়। যা গাজার পরিস্থিতি অসহনীয় করে তুলছে।’
এদিকে এক দশকের বেশি সময় পর আরব সম্মেলনের আয়োজক ইরাক। রাজধানী বাগদাদে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় গাজা পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিন ইস্যু।