যুদ্ধে একদিকে ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করে অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের খাদ্য সহায়তা পাঠিয়ে নিজ দেশসহ আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত মার্কিন প্রশাসন। ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখে রাশিয়া ও চীনের বিরাগভাজন যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ইরান ছাড়াও কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে অনেকটা বেসামাল ওয়াশিংটন। তাই বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালে বার্ষিক হুমকি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য কারা হুমকি হতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্কবার্তা দিয়েছে গোয়েন্দারা। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় হুমকি চীন, ইরান ও রাশিয়া। এছাড়া, শক্তিশালী বড় দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন ও শাসনব্যবস্থায় ক্রমশ ভঙ্গুর ও নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সামগ্রিক উপলব্ধি প্রতিফলিত হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
নিরাপত্তা হুমকির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে আন্তঃদেশিয় চ্যালেঞ্জ ও আঞ্চলিক সংঘাত। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চীন ও রাশিয়ার হুমকির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, হামাস ও ইসরাইলের সংঘাত বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও দেখা দিয়েছে। যার দায়ভার নিতে হবে ওয়াশিংটনকেই। হুতি বিদ্রোহীসহ বেশ কিছু আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে নিজের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক এভ্রিল হেইন্স বলেন, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বজায় রাখা মানে চীনকে একটা সতর্কবার্তা দেয়া। তাইওয়ান বা দক্ষিণ চীন সাগরে কিছু হলে যুক্তরাষ্ট্র হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। চীনা প্রেসিডেন্ট ভাবেননি ইউক্রেন প্রতিরোধ গড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়াবে। তবে এসব ঘটনায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে চীন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। এমনকি ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করবে চীন। বেইজিংয়ের সমালোচকদের ক্ষমতা থেকে সরানো এবং মার্কিন সমাজে বিভাজন বাড়ানোর লক্ষ্য তাদের।
মার্কিন গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন বলছে, চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা বছরের ব্যবধানে তিনগুণ বাড়িয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধ চলাকালীন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে। মস্কোকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে চীন। এ অবস্থায় ইউক্রেনে আরও সামরিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দারা। কারণ, তা না হলে রুশ বাহিনীর দখল করা অংশ কোনোদিনও উদ্ধার করতে পারবে না ইউক্রেন।
গাজায় চলমান ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ না হলে পুরো বিশ্বে নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আঞ্চলিক সংঘাতগুলো প্রভাব ফেলবে বৈশ্বিকভাবে। গাজা সংকট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। অনাহার ও অপুষ্টিতে ভোগা ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য মানবিক সহায়তাও পাঠানো যাচ্ছে না। যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছে।
ইসরাইলের এমন কঠোর নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর কারণে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার জোট সরকার বিপদের মুখে পড়তে পারে। যুদ্ধ শুরুর আগেই নেতানিয়াহুর শাসনক্ষমতা নিয়ে ইসরাইলিদের মধ্যে যে চরম অবিশ্বাস ছিল তা তুলে ধরা হয় মার্কিন প্রতিবেদনে। আগামীতে দেশটিতে একটি ভিন্ন এবং আরও মধ্যপন্থি সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে। যা নিরাপত্তা ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।





