প্রমত্তা যমুনার বুকে ধু ধু বালুচর। নদী যেন কয়েক খণ্ডে বিভক্ত। কোথাও পানি আবার কোথাও জেগেছে চর। যমুনার এই রুগ্নদশাই বলে দিচ্ছে নদীর অন্তর্জালা। সারিয়াকান্দির বেশিরভাগ চরে শুষ্ক মৌসুমে মিলছে না সুপেয় পানি। প্রতিবছরই নলকূপ গভীর থেকে গভীরে যাচ্ছে। আর পাশের গাবতলী উপজেলার খেত সবুজে ঢেকে গেলেও গভীর নলকূপের সংখ্যাই বলে দিচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি ছাড়া চাষাবাদ সম্ভব নয়।
স্থানীয় একজন বলেন, 'চৈত্র মাসে পানি শুকিয়ে গেলে যাতায়াত করতে কষ্ট হয়। নৌকা চলাচল করতে পারে না। মানুষ ফসল ঘোড়ার গাড়িতে নিয়ে আসে।'
সমতলে যখন এই দশা তখন বরেন্দ্র এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিস্থিতি জানতে এবার নওগাঁর পোড়সায় গমন। মধ্য মার্চে তীব্র রোদে খাঁ খাঁ করছে মাঠ। আম বাগান এবং বোরো জমিতে চলছে গভীর নলকূপ। বাড়িতে ব্যবহারের টিউবওয়েলগুলিতে পানি মিলছে না। অকেজো অধিকাংশ নলকূপ। খাবার ও ব্যবহারের পানি নিয়ে কষ্টের সীমা নেই এখানে।
দুর্ভোগে থাকা একজন বলেন, 'পানির খুবই কষ্ট আমাদের। আমরা আগে ১২০ ফুট গভীরে পানি পেতাম কিন্তু এখন ১৪০,১৬০ ও ১৭০ ফুট গিয়েও পানি পাচ্ছি না টিউবওয়েলে।'
আরেকজন বলেন, 'গরমকালে আমাদের খুবই কষ্ট। আমরা গোসল করতে পারি না।'
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে নওগাঁর পোড়শা উপজেলার ভাটনগর, গাংগুণিয়া তেতুঁলিয়া এবং ফাওড় ইউনিয়নে পানির স্তর নেমেছে ৩শ ফুটের নীচে। পানি না ওঠায় নষ্ট অগভীর সব নলকূপ। ৮ থেকে ১০ টি পরিবারের জন্য বিদ্যুৎচালিত মটর বসিয়ে কোনরকম পানির ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ। আর পানি নিয়ে জনজীবনে ভবিষ্যৎ আশংকার কথা জানান এ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
নওগাঁর পোড়শা উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হামিম বলেন, 'বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল সমুদ্র সেই পানি কিন্তু ধীরে ধীরে উত্তর অঞ্চলের দিকে আসতেছে। এটা ভবিষ্যতে আমাদের সুপেয় পানির বড় রকমের ঘাটতি দেখা দিবে।'
অস্বাভাবিকভাবে পানির স্তর নামায় গভীর নলকূপ বসানোর কাজ ২০১২ সাল থেকে বন্ধ রেখেছে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ। তবে মাঠে ঘাটে যত্রতত্র অগভীর নলকূপ বসিয়ে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে করে যথেচ্ছা ব্যবহারে পানির অপচয় বাড়ছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলীর মুহাম্মদ মতিউর রহমান বলেন, 'আমাদের টার্গেট হচ্ছে এলএলপি বা লো-লিট পাম্পের নিয়ে কাজ করবো। আমরা এলএলপি ব্যবহার করা শুরু করেছি। আমাদের আত্রায় উপজেলাতে ২৮ টি এলএলপি আছে। যার মাধ্যমে আমরা নদী থেকে পানি উঠিয়ে বিভিন্ন রবি শস্য আবাদ করছি।'
সেচ ও পানি নিয়ে কাজ করা এ কর্মকর্তার মতে, যে হারে মিঠাপানি কমছে তাতে কৃষি এবং জনজীবনে ঝুঁকি বাড়ছে।কৃষিতে খরচ বাড়বে ২০ থেকে ২৫ গুন। তাই এখন থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা সহিষ্ণু বিকল্প ফসলের চাষ, ভূপৃষ্ঠে পানির মজুত বৃদ্ধি করাসহ যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ তার।
বগুড়ার সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের পরিচালক মোঃ ফেরদৌস হোসেন খান বলেন, 'আমাদের যে নদী-নালা, খাল-বিল যেগুলো আছে এবং ছোট জলাধারগুলিকে সংস্কার করে বৃষ্টির পানিকে ধরে রাখার সুযোগ করে দেয়া।'
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেশে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের সংখ্যা ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৪টি।