খেজুর রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ। ইফতারে পছন্দের এই ফল এক বছরের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রায় দ্বিগুণের বেশি ছাড়িয়েছে দাম। ডলারসহ বৈশ্বিক নানা সংকটে দাম যা বেড়েছে- তার সাথে ব্যবসায়ীদের নানা কারসাজির অভিযোগতো আছেই।
রমজান মাসজুড়ে চাহিদার শীর্ষে থাকা ডালের দাম বাড়ে মাসখানেক আগে। পাইকারিতে কেজিতে দুই আর খুচরায় বেড়ে যায় ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। এখন আবার চোখ রাঙাচ্ছে ছোলার বাজার।
ক্রেতারা বলেন, 'এমনিতেই দাম বেশি থাকার কারণে কষ্ট ছিল। রোজা এসে জিনিসগুলোর দাম বেড়ে আরও নাভিশ্বাস অবস্থা হয়ে যাবে।'
ক্রেতারা আরও জানান, মানুষ চায় না রোজার সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়ুক। ইফতার বা সেহরি খানার কোনো সমস্যা হোক এইটা কেউ চায় না। যারা জিনিসের দাম বাড়ায় তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা। বলেন, তাদের কাছে ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান কোনো ধর্মই নেই।
ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের একটি রমজান। মুসলমানদের কাছে সিয়াম সাধনার মাস। কিন্তু রোজার বেশ আগে থেকেই অস্থির হতে থাকে বাজার। পণ্যের সরবরাহ থাকলেও বেশ দামে কিনতে হবে- এটাই যেন ভোক্তার নিয়তি। অথচ উৎপাদক আর ব্যবসায়ীর লাভ নিয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে- বলছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের আরবি ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, 'নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া ইসলাম সমর্থন করে না। বরং মুনাফা করবে ঠিক আছে কিন্তু সেটা সহনীয় পর্যায়ে রেখে এবং যিনি ক্রেতা আছেন তিনিও যেন সন্তুষ্ট হয়। ইসলামের ব্যবসায়ী নীতি হচ্ছে এইটা।'
গাইবান্ধা মহিমাগঞ্জ আলিয়া-কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বলেন, 'কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয় কোনো উদ্দেশ্য, সে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে অভিশপ্ত প্রাপ্ত হবে। সেজন্য কোনোভাবেই এটার সুযোগ নেই রমজান আসলেই দাম বাড়িয়ে দিবে। এইটা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।
রমজান শুধু নয়, চাহিদা আর যোগানের সূত্র ভেঙে বছরব্যাপী যারা পণ্য মজুত, সিন্ডিকেট করে ভোক্তার পকেট কেটে মানুষের কষ্ট বাড়ায়- ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, তাদের জন্য আছে কঠোর শাস্তির বিধান।
প্রভাষক মো. ওয়ালিউল্লাহ আরও বলেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি খাবার বা পণ্যদ্রব্যকে জমা রাখে তাহলে ওই ব্যক্তির উপর দারিদ্র আরও চেপে বসবে। ইসলামের নির্দেশনা আমরা মানি না বলেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।'
ড. মুহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বলেন, 'মুসলমানরা মুসলমানের জন্য, অন্যান্য ব্যক্তির জন্য ও পৃথিবীর মানবতার জন্য কল্যাণকামী হবে। উপকারই ধর্ম। অপকারে বা কারও ক্ষতি করে ধর্মচর্চা করার সুযোগ নেই।'
বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারের কঠোর নির্দেশনা বাস্তাবায়নে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা।