নাটোরের নেপালদিঘী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব একজন কৃষক আকরাম হোসেন। ভুট্টা খেতের আগাছা দমনের জন্য কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই কীটনাশক মেশানো ও ছিটানোর কাজ করেন তিনি। একই কাজ করতে গিয়ে এর আগেও অসুস্থ বোধ করেছেন আকরাম হোসেন। এরপরেও কেন মানছেন না সুরক্ষা নীতি?
নাটোরের কৃষক আকরাম হোসেন। ছবি: এখন টিভি
আকরাম বলেন, 'আমরা কৃষি কাজ করে এভাবেই ওষুধ দিয়ে চলে আসি। তেমন কিছু আমাদের হয় না। কিন্তু অনেক সময় শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ওষুধ দেয়া অনেক পরিশ্রমের কাজ। মাস্ক ছাড়া ওষুধ দেয়ার করণেই আমাদের ক্ষতি বেশি হয়। কিন্তু মাস্ক পড়লে নিশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ার কারণে মাস্ক ছাড়া ওষুধ দিই।'
প্রায় সব জায়গাতেই দেখা যায় এমন দৃশ্য। ছোট থেকে বড় কারও মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস নেই। অনেকের দাবি কীটনাশক প্রয়োগের নিয়ম জানেন না তারা।
একজন কৃষক বলেন, 'কীটনাশক দেয়ার সময় মাস্ক ব্যাবহার করা প্রয়োজন, এটা শুনেছি। কিন্তু আমরা করি না। প্রয়োজন হয় না আর কি।'
ফসল রক্ষায় কৃষক যখন স্প্রে করছে, তখন বাতাসের সাথে মিশে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করছে কীটনাশক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, সরাসরি এসব উপকরণ রক্তের সাথে মিশে যাওয়ার কারণে তাৎক্ষণিক এর প্রভাব বুঝতে না পারলেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা।
নাটোর সদর হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এ এইচ এম আনিসুজ্জামান পিয়াস বলেন, 'নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এটি যখন ভিতরে চলে যায়, তখন তারা চিকিৎসার জন্য আমাদের কাছে আসেন। তারা ভয় পেয়ে চলে আসেন। এতে চোখের পানি বেড়ে যায় , পাতলা পায়খানা ও বমি হয়।'
এমন অবস্থায় জেলার প্রায় ৩ লাখ কৃষক মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। কিন্তু কীটনাশক প্রয়োগে কৃষকদের সচেতন করতে নেই দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ। তবে কৃষি বিভাগের দাবি নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করছেন তারা।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, 'ভোক্তারা যেন নিরাপদ ও সুস্থ থাকে সে জন্য আমরা জৈব সার, জৈব বালাইনাশকসহ অন্যান্য কীটনাশকগুলো জমিতে স্প্রে করার সময় চোখে চশমা, হাতে গ্লাভস ও এপ্রন পড়ে স্প্রে করার জন্য তাদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে আসছি।'
বিশেষজ্ঞদের মতে শিগগিরই কৃষকদের সচেতন করতে না পারলে প্রভাব পড়বে ফসল উৎপাদনে। যাতে কৃষকের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দেশের কৃষি অর্থনীতি।