ভারতজুড়ে কৃষকদের তপ্ত বাণে জর্জরিত বিজেপি সরকার। জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন করে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি দমনে কঠোর অবস্থানে মোদি প্রশাসন। প্রশাসনের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে দাবি আদায়ে রাতভর রাজপথেই থাকছেন কৃষকরা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান হাজার হাজার কৃষক। শনিবার সূর্য ওঠার আগেই ফের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন।
আন্দোলনরত কৃষকরা বলেন, সন্তান-সংসার সব পেছনের ফেলে এখানে এসেছি। দাবি পূরণ হলেই ঘরে ফিরবো, নাহলে এখানেই বসে থাকবো।
তারা আরও বলেন, শস্যের ন্যায্য দাম না পেলে আমাদের ঋণ নিতে হয়। আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকে না তখন। দেশে যতো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, এর মধ্যে কৃষক কতোজন তাকিয়ে দেখুন একবার।
বিজেপি সরকারের সঙ্গে কৃষক নেতাদের শুক্রবার রাতের তৃতীয় দফার দীর্ঘ আলোচনা কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। তাই মঙ্গলবার থেকে চলমান 'ভারত বন্ধ' কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন কৃষকরা। রোববার ফের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় সম্মতি দিয়েছেন বলে রাজধানী ঘেরাও করা লক্ষ্যে তাদের 'দিল্লি চলো' পদযাত্রা স্থগিত রয়েছে।
তবে শুক্রবার দেশজুড়ে চলছে অবস্থান ধর্মঘট। উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের দাবিতে পদযাত্রা ঠেকাতে দিল্লির ২০০ কিলোমিটার আগে কৃষকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। বুধ ও বৃহস্পতিবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তেই তাঁবু গেড়ে অবস্থান নেন কৃষকরা।
কৃষি ও কৃষক কল্যাণের সহযোগী মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা বলেন, কৃষক নেতারা যেসব বিষয় আমাদের নজরে এনেছেন, সেগুলো আমলে নিয়েছি আমরা। রোববার সন্ধ্যায় আবারও আলোচনায় বসবো আমরা এবং এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবো।
পাঞ্জাব কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারভান সিং পানধের বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা যতক্ষণ চলবে, ততক্ষণ আমরা সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবো। কিন্তু আমাদের দিল্লি পদযাত্রা শেষ হয়নি। দিল্লি পর্যন্ত পদযাত্রার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে।
২০২০-২১ সালে কৃষকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে মোদি সরকার বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করে। সে সময় সব ধরনের কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও দুই বছরেও আলোর মুখ দেখেনি সেসব প্রতিশ্রুতি। ন্যূনতম মজুরি আর পেনশনের দাবিও উপেক্ষিত রয়ে গেছে। এ অবস্থায় ২১ দফা দাবি আদায়ে ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সকল কৃষিকাজ বন্ধ রেখে দেশজুড়ে সড়ক অবরোধে কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কৃষকদের বিভিন্ন সংগঠন।