স্বাস্থ্য
0

অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত নরসিংদীর স্বাস্থ্যসেবা

চিকিৎসা সেবা পেতে বাড়ছে বিদেশ নির্ভরতা

নানাবিধ অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত নরসিংদীর স্বাস্থ্যসেবা। সরকারি হাসপাতালে নামমাত্র খরচে চিকিৎসা পেতে সেবাগ্রহীতাদের টিকিটের লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষা থাকে। বেলা যত বাড়ে হাসপাতালে ততই বাড়ে রোগী। একইচিত্র জেলার সবগুলো চিকিৎসা কেন্দ্রের।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলায় ২৩৩টি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে আরও ১৭৭টি। তবে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে।

দালালের দৌরাত্ম্য, নির্দিষ্ট সময়ে টিকিট না পাওয়া, যথাযথ ওষুধ প্রদান না করা ও অপরিচ্ছন্নতাসহ অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানো ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি না থাকার অভিযোগ বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে। জেলায় কোন আইসিইউ বা সিসিইউ নেই। যাতে বেশিরভাগ সময় রোগীদের জেলার বাইরে ছুটতে হয়।

সেবাগ্রহীতারা বলেন, 'নরসিংদীতে একটা আইসিইউ নাই। অনেক সময় ঢাকা নিতে নিতে রোগী মারা যায়। অসুস্থ অবস্থায় এসেও ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা চলে যায় একটা টিকেটের জন্য। মাত্র একটা টিকেট কাউন্টার। এখান থেকে গরিব-অসহায় মানুষদের তারা ভুল বুঝিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা অতিরিক্ত তারা ইনকাম করে।'

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অন্তত ৭ লাখ রোগী বহির্গমন করে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ৷ এসব রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার প্রতিবছর দেশের বাইরে চলে যায়।

জেলা সদর হাসপাতালের টিকেটের দীর্ঘ সারি

এই জেলায় বিদেশগামী রোগীর সংখ্যা কম নয়। দেশের চিকিৎসা সেবার প্রতি আস্থা কম থাকাকে এর অন্যতম কারণ বলছেন বিদেশগামী সেবাগ্রহীতারা। বলেন, 'একেকজন ডাক্তার একেক কথা বলে। যে কারণে রোগ নিয়ে আমরা দ্বিধার মধ্যে পড়ে যাই। রোগীরা ওয়ান স্টপ সার্ভিস পাচ্ছে না। সব জায়গায় হেনস্তার শিকার হচ্ছে। যার কারণে অনেকেই ভারতসহ অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে।'

এদিকে মেডিসিন ও যন্ত্রপাতির দাম বাড়তি উল্লেখ করে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা বলছেন যখন তখন ফি বাড়ায় চিকিৎসকরা, যার ফলে তাদের লভ্যাংশে ভাটা পড়েছে। মেডিকেল কলেজ ও আইসিইউ বা সিসিইউর প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন তারাও।

নরসিংদী জনপ্রিয় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেন, 'সরকারি বা বেসরকারিভাবে আইসিইউ বা সিসিইউ যদি থাকতো তাহলে এই শাখাটা অনেক এগিয়ে যেতে পারতো। মেডিকেল কলেজ থাকলে আমরা কিছু অধ্যাপক পর্যায়ের ডাক্তারও পাবো।'

নিউ রোগমুক্তি জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, 'ডাক্তারদের পারিশ্রমিক অনেক বাড়তি। আর আমাদের এখানের অধিকাংশ রোগীই গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাদের চিকিৎসা দিতে আমাদের যে খরচ হয় তাতে লাভ আমরা পাই না বললেই চলে।'

আইসিইউ চালু করার কাজ চলমান আছে। সেইসঙ্গে বিদেশে রোগী যাওয়ার প্রবণতা কমাতে কাজ চলছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলাম। বলেন, 'নরসিংদীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল নতুন ভবনের মাধ্যমে ২৫০ শয্যায় রুপান্তরিত হবে। সেখানের ১০টি বেডে আইসিইউ করা হবে। এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।'

 নরসিংদী জেলার সবগুলো সরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রতিমাসে অন্তত ২ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকেন।