বাংলাদেশ গত দেড় দশকে অর্থনীতির সুবাতাসে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সেই সুবাতাসে বড় ধাক্কা জ্বালানি স্বল্পতা। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে অর্থনীতির জন্য ৫টি ঝুঁকির মধ্যে জ্বালানি স্বল্পতাকে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চাহিদার চেয়ে প্রতিদিন দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এর প্রভাব রাজধানীতেও পড়ছে। এতে করে বেড়েছে বৈদ্যুতিক চুলা ও রাইস কুকারের বিক্রি।
গত বুধবার দেশে আমদানিসহ গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৫৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট। রাজধানী ঢাকার বাইরে যে সংকট তীব্র সেই সংকটের রেশ ঢাকাতেও রয়েছে। শহরের বিভিন্ন সিএনজি স্টেশন ঘুরে আমরা জানতে চেষ্টা করি প্রকৃত পরিস্থিতি। গ্যাসের চাপ কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস নিতে পারছে না যানবাহনগুলো।
চালকরা বলেন, ‘সিরিয়াল ধরে গ্যাস নিতে হয়। আর কতটুকু গ্যাস পাবো তাও জানি না। এই গ্যাস দিয়ে সারাদিন চলতে পারি না।’
সিএনজি স্টেশনের কর্মচারীরা বলেন, ‘গ্যাসের প্রেশার কম। কিন্তু স্টেশনে গাড়ির চাপ বেশি। গাড়ির চালকরা তাদের সুবিধামতো গ্যাস নিতে পারছে না।’
দিন শেষে মানুষ যখন ঘরে ফিরছেন তখন তাদের খাবার রান্নার সংকট কতটুকু? সেখানে দেখা গেল চুলায় আগুন নিভুনিভু।
এক গৃহিণী বলেন, ‘গ্যাস থাকে না বলে রান্নাও করতে পারি না। আগে মাঝরাতে গ্যাস থাকলেও এখন সেটাও মিলছে না।’

রাজধানীর বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকট। ছবি: এখন টিভি
গ্যাস সংকটের বিকল্প হিসেবে চাকরিজীবী রুম্মান বৈদ্যুতিক চুলা ও রাইস কুকার কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘বাসায় গ্যাস থাকে না বললেই চলে। যেটুকু থাকে তা দিয়ে রান্নাও করা যায় না।’
গ্যাস সংকটে বৈদ্যুতিক এসব চুলার বিক্রি বেড়েছে। ৩ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে এসব পণ্য কেনা যাচ্ছে।
বিক্রেতারা বলেন, ‘এখন বৈদ্যুতিক চুলার বিক্রি বেড়েছে। আগে ১০টি বিক্রি হলে এখন ২০টি বিক্রি হচ্ছে, আর দামও বাড়েনি।’
শিল্পায়ন বাড়তে থাকায় দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে পৌঁছেছে। আমদানির পরও দৈনিক ঘাটতি থেকে যায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, দেশে আবিষ্কৃত গ্যাসের মজুত আছে ৮.৬৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, যা দিয়ে চলবে আগামী ১০ বছর। তবে জ্বালানি মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিচ্ছে, ২০২৬ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে।