শ্রমিক হিসেবে আমিরাতে গিয়ে এখন সফল উদ্যোক্তা

0

নির্মাণশ্রমিক হয়ে বিদেশযাত্রার শুরু। কিন্তু এখন ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তা হিসেবেই নিজেদের মেলে ধরছেন বহু প্রবাসী বাংলাদেশি। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে পেয়েছেন সিআইপি বা কমার্শিয়াল ইম্পর্টেন্ট পারসনের মর্যাদা। তাদের হাতেই আবার তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান।

প্রায় একযুগ ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার মোহাম্মদ মুছা। কাজ করেন দেশটির আজমান প্রদেশের একটি রেস্তোরাঁয়। সপ্তাহে ছুটি নেই। শুক্রবারও কাজে হাজির হতে হয় তাকে। কাজের ফাঁকে পরিবারের সঙ্গে খানিকটা আলাপচারিতায় কাটে অবসর। তবে একটানা কাজে লেগে থাকায় কর্মস্থলে পেয়েছেন পদোন্নতি।

মোহাম্মদ মুছা বলেন, 'আমাদের কোন ছুটি নাই। আমি ওয়েটারের ভিসায় আসছিলাম কিন্তু দুই-তিন বছর কাজ করার পর আমি এখন রেস্তোরাঁর শেফ।'

ব্যয়বহুল গাড়ি আর বাড়ি কিনে বেশ ভালোই আছেন রাঙ্গামাটি জেলার জসিম উদ্দিন। এই অর্জনের পেছনে তাকে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ১৫ বছর। চাকরির সন্ধানে আমিরাতে আসা জসিম উদ্দিনের নামের পাশে এখন যোগ হয়েছে সরকারের দেয়া সিআইপি খেতাবও।

তিনি বলেন, '২০১৭ সালে আমি নতুন নিজস্ব ব্রাঞ্চ করি। আর এখন ২০২৩ সালে এসে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮টি। এখানে ৪৫ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করছে।'

মুছা ও জসিমের মতো প্রতিবছর বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকেই। শুধুমাত্র গতবছরই আমিরাতে গেছেন ১ লাখ ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে গেছেন ৯০ হাজারের বেশি কর্মী। ৪৭ বছর এভাবেই দেশটিতে কর্মী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কর্মীদের হাতেই গড়ে উঠেছে বড় বড় ইমারত। আবার এদের অনেকে পেশা পরিবর্তন করে হয়েছেন উদ্যোক্তা।

বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর আশীষ কুমার সরকার বলেন, 'আরব আমিরাতের উন্নয়ন এবং এই অবস্থানের পিছনে বাংলাদেশিদের পরিশ্রম রয়েছে।'

|undefined

আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

দীর্ঘদিন লেগে থাকায় বহুপ্রবাসী ব্যক্তিজীবনে সাফল্য পাচ্ছেন। নিজেদের সমৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে করেছেন সমৃদ্ধ। রেমিট্যান্সে অবদান রাখায় এমন প্রবাসীদের স্বীকৃতিও দিচ্ছে সরকার। শুধু বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে ২০২১ সালে ৩০ জন, ২০২২ সালে ৩৭ জন ও চলতি বছর ২৬ জন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী নতুন করে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির খেতাব পেয়েছেন।

বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন বলেন, 'এখানকার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে প্রচুর অর্থ পাঠাচ্ছে। এতে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের মাত্রাও বেড়ে গেছে। এর প্রভাব আমরা এই অর্থবছরে দেখেছি।'

আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর বলেন, '৩০ এর অধিক আরব আমিরাত প্রবাসী এই দেশে সিআইপি মর্যাদা অর্জন করেছে।'

একসময় চোখ বন্ধ করে প্রবাস কিংবা প্রবাসীর কথা ভাবলে চোখের সামনে ভেসে আসতো হাড়ভাঙা পরিশ্রমের গল্প। কখনো মরুর প্রান্তর, কখনো ইমারত তৈরিতে দেখা যেত ব্যস্ততা। কিন্তু গত এক দশকে এমন চিত্রের পরিবর্তন এসেছে অনেকটাই।