নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা। যাদের জন্য এত আয়োজন, সেই ক্রেতার দেখা মেলাই ভার। সারাদিনে হয়তো দুই একজন ক্রেতার দেখা মিলছে। কোনদিন হয়তো বউনিই হচ্ছে না। হঠাৎ দুই একজন ক্রেতা এলে তাতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস।
সৈয়দপুরের চুড়িপট্টি নামে পরিচিতি এই মার্কেটের প্রায় দেড়শো দোকানের প্রতিটিতেই এমন চিত্র। মার্কেটে বিক্রি নেমেছে এক তৃতীয়াংশে।
ব্যবসায়ীরা জানান, 'বেচাকেনা এখন নাই বললেই চলে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। তারা কিনতে পারলে তবেই না বেচাকেনা হবে।'
সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠার পর এই চুড়িপট্টি বা মনিহারি পট্টি ছিল শহরের একমাত্র বাজার। শাকসবজি, মাছ-মাংস, চাল-ডাল-তেল-নুন সবই মিলতো এক ছাদের নিচেই। ১৯৪৭'র পর ডালপট্টি নাম পায় বাজারটি। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে ধীরে ধীরে চাল-ডালের আলাদা বাজার হলে নানা পণ্যের কারণে নাম হয় মনিহারি মার্কেট বা চুড়িপট্টি। শুরু থেকেই এই মার্কেটের ব্যবসা ছিল অবাঙালি বা বিহারিদের হাতে।
এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরেই আমরা বিহার থেকে চলে আসলাম। তারপর থেকে এখানেই বসবাস শুরু করি।'
শুধু গয়না বা খেলনা নয়, বলা হয়ে থাকে এই মার্কেটে পাওয়া যায় না এমন কোন জিনিস নেই। দেশি-বিদেশি কসমেটিকস, স্টেশনারি, মুদি, ব্যাগ বেল্ট, সুতা, ইলেকট্রিক, গৃহস্থালিসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসই পাওয়া যায় চুড়িপট্টিতে।
রংপুর বিভাগের প্রায় সব জেলা থেকে এখানে পাইকারিতে পণ্য কিনতে আসেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অন্য জেলাতে একই ধরনের মার্কেট থাকলেও তুলনামূলক দাম কম এবং দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ততার কারণে এখানেই ভিড় করেন ক্রেতারা।
পাইকারি বিক্রেতারা বলেন, ‘অন্যান্য জেলা থেকে কোন পার্টিই আসছে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০০০ টাকা বিক্রিও হয়না।'
করোনার পর থেকেই ব্যবসায় ধস, বলছেন ব্যবসায়ীরা। এরপর এখন হরতাল-অবরোধ। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস। তবে, নির্বাচনের পর ব্যবসা আবার স্বাভাবিক হওয়ার আশাও দেখছেন তারা।
মনোহারী মার্কেটের সভাপতি মোঃ মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘সহজ শর্তে ঋণ পেলে ব্যবসায় আগের মত গতি ফিরে আসবে।'
শুধু এই মনোহারী মার্কেটের ওপর নির্ভরশীল অন্তত এক হাজার পরিবার।