স্তূপ করে রাখা কাপড়গুলো দেখে মনে হওয়া কঠিন যে এই ফেলনা কাপড়েই আসে লাখো ডলার। টুকরো ঝুট কাপড় জোড়া দিয়ে যে পোশাক তৈরি হচ্ছে তা থেকেই আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।
প্রথমে কাপড়গুলোকে প্যান্টের আকারে কাটা হয়। এরপর ইলেক্ট্রিক মেশিনের সূচের প্রতিটি নিখুঁত বুননে তৈরি হয় প্যান্ট আর ট্রাউজার। সেলাই শেষে আয়রন মেশিনে ভাঁজ করে জুড়ে দেয়া হয় বেল্ট। ট্যাগ লাগিয়ে প্যাকেজিং করলেই প্রস্তুত রপ্তানির জন্য।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ক্ষুদ্র তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা প্রায় চারশ'। কিন্তু হাতেগোনা তিন থেকে চারটি কারখানায় তৈরি হয় রপ্তানিযোগ্য পোশাক। অথচ বছর দশেক আগেও একশর বেশি কারখানা ব্যস্ত থাকতো রপ্তানি পোশাক তৈরিতে। ভারত ছাড়াও প্যান্ট, হুডি এমনকি জ্যাকেট যেত নেপাল ও ভুটানে। কিন্তু নানাবিধ সমস্যায় দিনকে দিন কমছে এর পরিমাণ।
প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক মো. সুজন বলেন, ‘আমাদের দেশে পণ্যেরে কাঁচামালের দাম অনেক বেশি। দিন দিন আরো বাড়ছে। কিন্তু ভারতে দাম বাড়তেছে না।’
আরেক রপ্তানিকারক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা যদি কম মূল্যে কাঁচামাল পাই তাহলে বেশি উৎপাদন হবে। বেশি উৎপাদন হলে দেশে বেশি রেমিট্যান্সও আসবে।’
ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর সৈয়দপুরে প্রায় দুই লাখ ডলারের তৈরি পোশাক ভারতে রপ্তানি হয়েছে। যা গত দশ বছরে কমেছে ৫০ শতাংশ। কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি একটি গার্মেন্টস পল্লী তৈরি না হওয়াসহ রপ্তানিকারকদের সংগঠন ও মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতাও অনেকটা দায়ী বলছেন তারা।
সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক শিল্প সমিতির সহসভাপতি আরশাদ আমির পাপ্পু বলেন, ‘পাড়া-মহল্লায় কারখানাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখন যদি একজায়গায় একত্রিত করতে পারি বা গার্মেন্টস পল্লী হিসেবে যদি সবাইকে একটা বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে মনে করেন আমরা সব এক জায়গায় থাকলাম। এক জায়গায় থাকলে সুবিধা বায়াররা আমাদের কাছে এসে নিতে পারবে।’
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা পেলে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, তারা যেসব সমস্যায় পড়ছে সেগুলো ব্যাপারে যদি আমাদের জানায়, আমরা তাদের সঙ্গে বসতে চাই, সমস্যাগুলো শুনতে চাই। এর মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রস্তুত আছে জেলা প্রশাসন।’
সৈয়দপুরের প্রায় চারশ কারখানায় কাজ করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। রপ্তানিযোগ্য পোশাক তৈরি হওয়া তিনা থেকে চারটি কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৬০ জন কর্মী।