বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগরের মাঝে শান্ত, স্নিগ্ধ- নিঝুম দ্বীপ। বল্লারচর, কমলারচর, চর ওসমান আর মৌলভীর চর নিয়ে দ্বীপটির অবস্থান নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে।
উর্বর জমি আর নদী-সাগরের মাছের টানে প্রায় ১৪ হাজার একরের এই দ্বীপে বসতি গড়েছে হাতিয়া, ভোলার মনপুরা, শাহবাজপুর ও লক্ষ্মীপুরের রামগতির নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।
দ্বীপটিতে এখন প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসতি। সবুজ গাছ-গাছালি আর নানা জাতের পাখপাখালি এখানে ভুবন গড়েছে নিবিড় মমতায়, যার বুক চিড়ে বয়ে গেছে অনেকগুলো খাল। জোয়ারের সময় সাগরের নোনা পানিতে ভরে যাওয়া নিঝুমদ্বীপ এর নামের মতই রোমাঞ্চকর প্রকৃতিতে গড়া।
স্থানীয়দের দাবি, ষাটের দশকে সাগরগর্ভ থেকে এ দ্বীপ জেগে উঠেছে। বালুয়ার চর, চর ওসমান- এমন নাম বদলের পর সবশেষ ঠিক হয়েছে নিঝুমদ্বীপ নামে। এটিকে ২০০১ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, জেলেরা মাছ ধরতে এসে প্রথম এই চরটা দেখে। জেলেরাই এর নামকরণ করে ইছামতি।
কেওড়া গাছপালা পরিবেষ্টিত এ দ্বীপটিতে ১৯৭৮ সালের দিকে প্রাণিবৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য চার জোড়া চিত্রা হরিণ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে সেই চিত্রা হরিণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজারে।
নিঝুম দ্বীপে রয়েছে অপূর্ব সবুজের সমারোহ, বিস্তীর্ণ সমুদ্রসৈকত, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, নদী, বিভিন্ন প্রকার পশুপাখিসহ বিচিত্র ধরণের জীব বৈচিত্র্য। বিস্তীর্ণ সৈকতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য।
একইসাথে প্রকৃতির অনেক রূপ ও বৈচিত্র এসে ধরা দিয়েছে এই দ্বীপে। এর সঙ্গে, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জীবনাচার মিলিয়ে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য।
পর্যটকরা জানান, 'পরিবার নিয়ে ঘুরাফেরার জন্য এটি উৎকৃষ্ট জায়গা। এখানে অনেক প্রকারের পশু-পাখি এবং গাছপালা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করলে মানুষের আগমন ঘটবে অনেক।'
নোয়াখালীকে 'নিঝুম দ্বীপের দেশ' নামে ব্রান্ডিং করা কথা। এর অংশ হিসেবে দ্বীপটিতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়নে এখনো নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। অথচ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও ভালো মানের হোটেল- রিসোর্ট গড়ে তোলা গেলে উপকৃত হত পর্যটন খাত। সে দাবিই এখানকার স্থানীয়দের।
তারা বলেন, 'এখানে যদি বাইরে থেকে মানুষ আসে তাহলে আমাদের ব্যবসার অনেক প্রসার হবে। আরও কিছু রির্সোট করলে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে।'
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: দিনাজ উদ্দিন বলেন, 'পর্যটন কর্পোরেশন গৃহীত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে এই এলাকার অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, 'ইতিমধ্যেই পর্যটন কর্পোরেশন ১৬ একর জমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে পর্যটন বান্ধব হিসেবে দ্বীপটিকে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।'