এশিয়া
বিদেশে এখন
0

চীন সীমান্তে মিয়ানমারের ২ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

International Desk

বিদ্রোহীদের অপারেশন টেন-টোয়েন্টি সেভেনে নাকাল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। চীন-মিয়ানমার সীমান্তের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাওয়ায় বড় ধাক্কা খেয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত বাণিজ্য।

কমপক্ষে চারটি প্রদেশে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইরত বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলছে তুমুল সংঘাত। এর মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যেই বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাতে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি মানুষ, জানিয়েছে জাতিসংঘ। চিন প্রদেশে সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষ প্রতিদিনই পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ভারতের মিজোরামে।

ভারতে সীমান্তবর্তী একটি স্কুল এখন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কয়েক হাজার মানুষের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র। জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী আর সংখ্যালঘু আদিবাসী বিদ্রোহীদের সংঘাতের মাশুল গুণছেন এসব মানুষ।

আশ্রয়প্রার্থী এক ব্যক্তি নিজ দেশে ফিরতে চান জানিয়ে বলেন, "আমার ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিছুই বাকি নেই। সর্বস্ব হারিয়েছি। কিন্তু আমি আমার গ্রামে ফিরতে চাই, নতুন বাড়ি বানাতে চাই। এখন এখানে শান্তিতেই আছি। কিন্তু নিজের বাড়ির তো কোনো তুলনা হয় না। কবে ফিরবো, সেই অপেক্ষায় দিন গুণছি।"

মিয়ানমারে আদিবাসীদের কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন একজোট হয়ে তিন সপ্তাহ ধরে চালাচ্ছে আগ্রাসী আক্রমণ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, এতে দেশজুড়ে সামরিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পালে হাওয়া পেয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্রোহীরা। সহিংসতার তীব্রতায় প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ফেলে পরিবার নিয়ে সীমান্তপথে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এদের মধ্যে অন্যতম উত্তর-পশ্চিমের চিন প্রদেশ থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্যে পালিয়ে যাওয়া কয়েক হাজার মানুষ।

মিজোরামে আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তি আক্ষেপ জানিয়ে বলেন, "বোমা হামলাকে ভয় না পেয়ে তো উপায় নেই। সীমান্তের নদী পেরিয়ে পালিয়ে এসেছি আমরা সবাই। আতঙ্কে খালি দৌড়েছি আর দৌড়েছি। ড্রোন দিয়ে বোমা ফেলা হচ্ছিল আমাদের বাড়িঘরে।" 

সেনাশাসিত মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করেছে বা অপহৃত হয়েছে বলে গেলো সপ্তাহেই দাবি করে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইরত বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মি।

জাতিসংঘের সবশেষ তথ্য বলছে, শুধু রাখাইনেই সাম্প্রতিক সংঘাতে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি মানুষ। পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতিতে রাজ্যের প্রাদেশিক রাজধানী সিতওয়েতে জারি রয়েছে কারফিউ। এছাড়া চীন সীমান্তসহ দেশের উত্তরে বিভিন্ন রাজ্যের শহর আর শতাধিক সামরিক নিরাপত্তা চৌকি, এমনকি সীমান্ত বাণিজ্যেরও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনাবাহিনী।

ইউএস ইনস্টিটিউট ফর পিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বার্মা প্রোগ্রাম জেসন টাওয়ার বলেন, "সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হলো, চীন-মিয়ানমার সীমান্তের একটি প্রধান শহর চিনশেহাও এবং কুনলং নামের আরেকটি শহর দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এর মানে হলো চীন-মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সক্ষমতা হারিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা প্রশাসন, যা সেনাবাহিনীর জন্য বড় ধাক্কা।" 

সহিংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের বাসিন্দারা চীনা ভূখণ্ডেও অনুপ্রবেশ করছে এবং মানবিকতার স্বার্থে তাদের ঢুকতে এবং থাকতে দিচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার জানায় বেইজিং। সংঘাতরত সব পক্ষকে বৈরিতা ভুলে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার এবং দেশত্যাগী শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করারও আহ্বান জানায় চীন সরকার।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে ২০২১ সালে দেশের নেতৃত্বভার দখলের পর সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। চিন-রাখাইন ছাড়াও সংঘাত চলছে শান, কায়াহসহ আরও কয়েকটি প্রদেশে। উত্তরাঞ্চলে চলমান সহিংসতায় খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যেতে পারে পুরো মিয়ানমার, সম্প্রতি এমন শঙ্কা জানান খোদ সেনাবাহিনীর নিয়োগপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন্ত সোয়ে।