কর্মশালার বলা হয়, প্রত্যেক মৌসুমে আমাদের দেশে বিশেষ করে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিস্তৃত পাহাড়ি অঞ্চল এবং হাওড় এলাকার পতিত জমি, পুকুর পাড় জমির আইলে নানা ধরনের অচাষকৃত শাক ও উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যা সার বা পানি দিয়ে যত্নে পালন হয় না, ফলে প্রাকৃতিক নির্বাচন ছাড়া অনেকটাই অবিকৃত থেকে গেছে এদের অবয়ব, এদের স্বাদ ও গন্ধ। বহু শাক, সবজি ও উদ্ভিদ রয়েছে যাদের আবাদ করা হয় না কিন্তু এসব লতা-পাতাকে শাক হিসেবে খাওয়া হয়, যা স্বাদে-গন্ধে এরা একটা অন্যটা থেকে কত অনন্য। অচাষকৃত এসব শাকপাতা, লতা গুল্ম, ঔষধি উদ্ভিদ বৈচিত্র্যই পাবর্ত্য ও সমতল জনপদের মানুষদের পুষ্টির অন্যতম উৎস। এসব শাক ও গুল্ম পুষ্টি ও ভিটামিনে ভরপুর।
স্মার্ট ভিলেজ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএআরসি, ঢাকার মেম্বার ডিরেক্টর ড. বকতিয়ার হোসেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএআরআইয়ের পরিচালক (গবেষণা) ড. মুন্সী রশিদ আহমেদ, হর্টিকালচার উইং, ডিএআই, খামারবাড়ি ঢাকার পরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএআরআইয়ের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নাজিম উদ্দিন। এছাড়া কর্মশালায় বেসরকারি সংস্থা 'আনন্দ' নির্বাহী পরিচালক মনিরুজ্জামান মিয়া, ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে'র হেড অব প্রজেক্ট মো. মামুনুর রশিদসহ প্রায় ৩০ জন কৃষি, মৎস, প্রাণিসম্পদ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় পার্বত্য এলাকার ১২টি ও হাওড় এলাকার ৮টিসহ মোট ২০টি অপ্রচলিত বা অচাষকৃত খাদ্য-শস্যের পুষ্টি গুণাগুণসহ অপ্রচলিত বা অচাষকৃত খাদ্যসমূহের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। যেমন হাওড় অঞ্চল বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত এলাকা হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন মৌসুমে প্রায় ৮ থেকে ১০ রকমের অনাদৃত ও অচাষিত উদ্ভিদ খুবই জনপ্রিয়। এর মধ্যে বর্ষা মৌসুমে কেউরালী ও শাপলার ডগা অন্যতম। একই সাথে গিমাইশাক হিসেবে খ্যাত কেউরালী ও শাপলা কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করার পাশাপাশি আয়রণ ও আয়োডিনের অন্যতম উৎস। হাওর বা জলমগ্ন অঞ্চলে শালুক ও পানিফল একটি সুস্বাদু ও উচ্চ পুষ্টিকর খাবার। পুষ্টিবিদগণের মতে, শালুক ও পানিফলের স্টার্চ খুবই মানসম্মত, যা ধীরে ধীরে ভাংগে এবং ক্ষতিকর গ্লুটেন মুক্ত।
গবেষণায় বলা হয়, গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের অপুষ্টি দূরীকরণে যুগ যুগ ধরেই ভূমিকা রাখছে বাহারি রকমের অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। বাংলাদেশের খাল-বিল, নদী-নালা, পতিত জমি, বাড়ির আশপাশেই রয়েছে এসব উদ্ভিদ বৈচিত্র্যগুলো। যে উদ্ভিদগুলো মানুষের নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির আধাঁর হিসেবে ব্যবহার হয়। এসব ফসল থেকে স্থানীয় জনগন প্রতিদিনের তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে। এসব অচাষকৃত উদ্ভিদ স্থানীয় মানুষ কিভাবে ব্যবহার করছে এবং সংরক্ষণে তারা কি ধরনের ভূমিকা রাখছে সে বিষয়ে জনগোষ্ঠির মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং উদ্ভিদ বৈচিত্র্যগুলো চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও ব্যবহার বৃদ্ধি করতে কর্মশালায় বিভিন্ন ধরনের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।—প্রেস বিজ্ঞপ্তি