হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যা এই অঞ্চলের কৃষকদের নিয়মিত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢলে জেলার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ বছরও টানা তিন দফা বন্যায় প্রায় ৪৫ কোটি টাকার সবজির ক্ষতি হয়। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। এমন অবস্থায় চলতি মৌসুমের শীতকালীন সবজি উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
তবে কৃষকদের এমন দুশ্চিন্তা কিছুটা হলে কমাতে এগিয়ে এসেছেন সুনামঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের পলাশ ইউনিয়নের কৃষক শাহ আলম। তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ১২ মাসী উচ্চ ফলনশীল সবজি চারা উৎপাদন করে। এক একর জমিতে করেছেন পলি হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
আধুনিক পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ট্র্যাপে মাটির পরিবর্তে নারকেলের ছোবড়ায় তৈরি কোকোপিট প্রক্রিয়াজাত ও জীবাণুমুক্ত করে বীজ রোপন করা হচ্ছে। সেই সাথে উপরে সেড দিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কৃত্রিম উপায়ে। এখানে উৎপাদিত চারা ২০ দিন পর রোপন যোগ্য হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কৃষকরা এসে এখান থেকে টমেটো, ফুলকপি ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
অন্য বছরের তুলনায় এই বছর সহজেই সবজির চারা পাওয়ায় খুশি কৃষকরা। পলি হাউস কর্তৃপক্ষ জানায়, অতিবৃষ্টি ও অকাল বন্যায় চারা রাখতে পারছেন না কৃষকরা। সেকারণে বিকল্প চিন্তা থেকে পলি হাউসের পথচলা। ইতোমধ্যে টমেটো, ফুলকপিসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার চারা কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
কৃষকদের মধ্যে একজন জানান, ভাটি এলাকা আমরা প্রতিবছরই বন্যার দুর্যোগের কারণে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।
এই নার্সারি করার পর টমেটো, পেঁপের চারা নিয়ে রোপন করেছেন এক কৃষক। ফলনও ভালো পেয়েছেন। তাই লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
পলি হাউসের মালিকের তৈরী নার্সারি। ছবি: এখন টিভি
পলি হাউসের মালিক ও কৃষক শাহ আলম বলেন, 'আমি নিজেই উদ্যোগ নিলাম। আর এই নার্সারি টমেটো, পেঁপের চারাসহ মরিচ ,বেগুন, ফুলকপি, বাধাঁকপি এবং বিভিন্ন ধরণের সবজির চারা উৎপাদন করছি।'
তবে আধুনিক প্রক্রিয়ায় চারা উৎপাদনের মাধ্যমে জেলার ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিয়া বলেন, 'মূলত পলিনেট হাউসটা হচ্ছে এটা তাপমাত্রা, বাতাস বা বৃষ্টিপাতকে কাজে লাগিয়ে এটি যেন স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে আমরা যেন ব্যাপকভাবে চারা উৎপাদন করতে পারি।'
চলতি বছর আর কোনোও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রায় হাজার কোটি টাকার সবজি উৎপাদিত হবে এই জেলা থেকে।