সঠিক পূর্বাভাসের অভাবে বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারান লাখো মানুষ: ডব্লিউএমও

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা | ছবি: সংগৃহীত
0

আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস না পাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারান লাখ লাখ মানুষ। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর পাশাপাশি পূর্বাভাস ব্যবস্থার পরিসর বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বনাঞ্চল উজাড়, কলকারখানা, অতিরিক্ত যানবাহনের ব্যবহারসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণেই বৈশ্বিক জলবায়ুতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। যার বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। সারাবছরই খরা, বন্যা, ভূমিধস, ভূমিকম্প ও দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে। আর দিন দিন ভয়াবহ হয়ে ওঠছে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও ব্যাপক ক্ষতির মুখে বিশ্ব।

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী সঠিক সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস না পাওয়া। সতর্কবার্তার অভাবে পর্যাপ্ত পূর্বপ্রস্তুতি নিতে না পারায় প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। এমনকি পূর্বাভাস পাওয়ার ব্যবস্থা নেই এমন দেশগুলোতে প্রাণহানি স্বাভাবিকের তুলনায় ছয়গুণ বেশি।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গেল ৫০ বছরে প্রাণ হারিয়েছে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। যার মধ্যে ৯০ শতাংশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। কিন্তু গেল দশকে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বর্তমানে অন্তত ১০৮টি দেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানোর ব্যবস্থা থাকলেও আগে এ সংখ্যা ছিলো মাত্র ৫৮।

আরও পড়ুন:

ডব্লিউএমওয়ের মহাসচিব সেলেস্তো সাউলো বলেন, পূর্ব সতর্কীকরণ মানে, পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমাদের লক্ষ্য কেবল বিশ্বকে সর্তক করা নয় বরং বৈশ্বিক ক্ষমতায়ন সৃষ্টি করা। আগামী বছরগুলোতে টেকসই ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সুযোগ রয়েছে। আমরা শুধু পর্যবেক্ষক নই, আমরা টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর।

তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে করা একটি জরিপ অনুযায়ী, ৬২টি দেশের মধ্যে অর্ধেকেরই কেবল মৌলিক সতর্কবার্তা জানানোর সক্ষমতা রয়েছে। আর ১৬ শতাংশেরও কম দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানোর ক্ষমতা প্রাথমিক সক্ষমতার নিচে।

২০২৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অসংখ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগেরই তীব্রতা আগের দুর্যোগের তুলনায় অনেক বেশি। মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে তীব্র বন্যা, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল-এসব বিপর্যয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপসহ অনেক দেশ।

সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্স বলছে, জলবায়ুর পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব থেকে কোনো দেশ বা অঞ্চলই রেহাই পাচ্ছে না। তবে সুইজারল্যান্ডের পর্বত হিমবাহের ওপর নিয়মিত নজরদারির কারণে চলতি বছরের মে মাসে হিমবাহ ধসের বিষয়ে সঠিক সময়ে সতর্কবার্তা পাওয়ায় দেশটির ব্লাটেন গ্রামকে সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয় বলেও উল্লেখ করে সংস্থাটি।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতা বেড়েছে ইউরোপের দেশ আইসল্যান্ডে। চলতি বছরেই ২৯.৫ ডিগ্রির রেকর্ড ছুঁয়েছে দেশটির তাপমাত্রা। যা দেশটির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ১৯৩৯ সালে আইসল্যান্ডের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রেকর্ড তাপমাত্রায় দেশটিতে প্রথমবারের মতো মশার সন্ধানও পাওয়া গেছে। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে দেশটি মশামুক্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিলো।

ইএ